🌐 ওয়েব ব্রাউজার (Browser) কি, এর কাজ কি এবং জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার গুলো কি?
আজকে ইন্টারনেটের যুগে ওয়েব ব্রাউজার সবাই ব্যবহার করে। কারণ ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া ইন্টারনেট চালানো সম্ভব নয়। ওয়েব ব্রাউজার আমরা মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অ্যাপেল ডিভাইসে ব্যবহার করে ইন্টারনেট এক্সেস করে থাকি।
উইকিপিডিয়া ডেফিনেশন হিসেবে ওয়েব ব্রাউজার এমন একটি software যার সাহায্যে কোন user কোন একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ওয়েব সার্ভার থেকে তার ডিভাইসে দেখতে পারে।
Browser মানে হলো খোঁজা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন জিনিস খোঁজা হলে তাকে ব্রাউজিং বলা হয়। আজকের যুগে প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ internet ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্রাউজিং করে থাকে।
Web Browser কি?
ওয়েব ব্রাউজার (Web Browser) এ দুটি আলাদা শব্দ। ওয়েব মানে হলো 'internet' এবং 'browser' মানে হলো খোঁজা। সুতরাং ওয়েব ব্রাউজার এর পুরো কথা হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন কিছু খোঁজা বা খুঁজে বের করা।
Web Browser হলো একধরনের এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। যেটি ডিভাইসের মধ্যে ইনস্টল করে ইন্টারনেট থেকে কোন জিনিস খোঁজার জন্য ব্যবহার করা হয়। ওয়েব ব্রাউজার এর মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের টেক্সট, ভিডিও, ওয়েব পেজ এবং কনটেন্ট দেখা ও পড়া যায়।
ইন্টারনেটে সবকিছু HTML ভার্সনে আপলোড করা থাকে। কিন্তু মানুষের পক্ষে HTML ভার্সনের সাহায্যে ইনফরমেশন নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ওয়েব ব্রাউজার সেটি কি আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সলেট করে আমাদের সামনে পরিবেশন করে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্রাউজারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে:
প্রথম ওয়েব ব্রাউজার কোনটি?
World wide web বা www এটি হলো প্রথম ওয়েব ব্রাউজার এবং এই ওয়েব ব্রাউজারের সাহায্যে প্রথম internet access করা হয়। ১৯৯০ সালে স্যার Tim Berners Lee তৈরি করেছিলেন। এরপর ১৯৯১ সালে লাইন মোড ব্রাউজার তৈরি করা হয়। এর পরের অংশ শুধু এগিয়ে চলার গল্প। ইন্টারনেট জগতের উন্নতির সাথে সাথে ব্রাউজারের অভুত পূর্ব পরিবর্তন এসেছে।
১৯৯৩ সালে তৈরি হওয়া মোজাইক ব্রাউজার পৃথিবীর প্রথম সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। এই মোজাইক ব্রাউজারটির মধ্যে ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)। এরপর এলো মাইক্রোসফট এর যুগ। মাইক্রোসফট এর বাজারে আনা প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজারটির নাম হলো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার যেটি microsoft ১৯৯৫ সালে বাজারে এনেছিল।
মূলত মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের pre installed অবস্থায় আসতো। ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্রাউজারের জগতে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সবচেয়ে উপরের দিকে ছিল। ২০০২ এর হিসেব অনুযায়ী ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৯৫% দখল করেছিল। এরপর ধীরে ধীরে ওয়েব দুনিয়া আরেক ইতিহাসের মুখে এসে দাঁড়ালো যখন ২০০৮ সালে Google Chrome Browser প্রথম বাজারে আনলো।
২০০৮ সালে গুগল ক্রোম ব্রাউজার আসার পর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং বর্তমানে গুগল ক্রোম ব্রাউজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্রাউজার।
২০১৯ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন মানুষ ব্রাউজার ব্যবহার করেন। সমস্ত ব্রাউজার এর মধ্যে google chrome সবচেয়ে জনপ্রিয় যার বর্তমান মার্কেট শেয়ার ৬৪%।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে Apple এর সাফারি যার মার্কেট শেয়ার ১৮%। এছাড়া অন্যান্য ব্রাউজার গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফায়ারফক্স এবং মাইক্রোসফটের এজ। মাইক্রোসফট ও প্রতিযোগিতা ছাড়লো না।
২০১৫ সালে Windows 10 রিলিজ করার সাথে সাথে ক্রোমিয়াম নির্ভর এজ ব্রাউজারটি বাজারে আনে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর মত অতটা না হলেও এজ ব্রাউজার ও বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে।
Google Chrome ওয়েব ব্রাউজার ডেভেলপ করেছে যা পরবর্তীকালে ওয়েব ব্রাউজারের দুনিয়াতে বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করেন। গুগল ক্রোম এর global market শেয়ার প্রায় ৬৫%।
জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েব ব্রাউজার:
১. গুগল ক্রোম (Google Chrome):
গুগল ক্রোম বর্তমান সময়ে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সেরা ব্রাউজার। গুগল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজারে জগতে সবচেয়ে পরিচিত নাম। ২০০৮ সালে বাজারে আসার পর windows এর সাথে সাথে এটি ম্যাক এবং লিনাক্স কম্পিউটারের জন্য available হয়। এছাড়াও মোবাইলের জন্য অ্যান্ড্রয়েড এবং আই ও এস অপারেটিং সিস্টেম সবার জন্যই পাওয়া যায় google chrome। এর কারণ যেহেতু গুগল ক্রোম গুগল এর একটি প্রোডাক্ট তাই গুগলের যে কোন সার্ভিস গুগল ক্রোমে খুব ভালো লোড হয়। গুগল ক্রোমের অসাধারণ ব্রাউজার এক্সটেনশন লাইব্রেরী এবং প্রতিনিয়ত সিকিউরিটি আপডেট গুগল ক্রোম কে অন্যান্য ব্রাউজার থেকে এগিয়ে রেখেছে। অনেকেই বলেন গুগল ক্রোমের incognito মোড প্রাইভেসিকে সম্পূর্ণরূপে প্রোটেক্ট করতে পারেনা। তবে কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও google chrome অনেক এগিয়ে।
২. মাইক্রোসফট এজ (Microsoft Edge):
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর পর এটি মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। Microsoft Edge এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলির মধ্যে হল built-in কর্টানা সাপোর্ট, বুক মার্ক এবং browsing history synced, টাইমলাইন সাপোর্ট।
এছাড়াও ভয়েসে dictate ও মাইক্রোসফট এজ এর নতুন একটি প্রযুক্তি। তবে অনেকের মতে মাইক্রোসফট এজ একটু বেশি resource hungry software যার ফলে আপনার মেশিনের কনফিগারেশন কম থাকলে আপনি মাইক্রোসফট এজ এর থেকে ১০০% পারফরম্যান্স পাবেন না।
৩. আলোহা (Aloha) ব্রাউজার:
আলোহা ব্রাউজারটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্রাউজার। ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য আলোহা ব্রাউজার উপযোগী কারণ এই ব্রাউজার ব্যবহার করলে আপনারা আলাদা করে কোন VPN Software ব্যবহার করার দরকার হয় না। এটির built-in ভার্চুয়ালিটি ভিডিওস সাপোর্ট ব্রাউজারটিকে বেশ আকর্ষণীয় করেছে।
ব্রাউজারটির কিছু দুর্বল দিক রয়েছে যেমন ব্রাউজারটিতে প্রচুর সংখ্যক অবাঞ্চিত এড দেখা যায়, এটি আই এস এর ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট করে না।
৪. ব্রেভ (Brave) ব্রাউজার:
Brave ব্রাউজার মূলত প্রাইভেসি কেন্দ্রিক ব্রাউজার। আপনারা যারা নিজেদের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে চান তাদের জন্য Brave ব্রাউজারটি দারুন। এটি অ্যাডভারটাইসিং, কুকিজ, ফিসলিং থেকে অটোমেটিক্যালি আপনার ডিভাইসটি রক্ষা করে।
এটির মধ্যে থাকা https everywhere প্রযুক্তির সাহায্যে এটি ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্টিং কে প্রতিহত করতে পারে। এছাড়াও ব্রাউজারটির মধ্যে অটোমেটিক্যালি cryptocurrency ওয়ালেট সাপোর্ট আছে। আপনি যদি ক্রিপ্টো কারেন্সিতে আগ্রহী হন তবে এই ক্রিপ্টো কারেন্সিও আপনি আপনার ব্রাউজার এর মাধ্যমে জমাতে পারেন basic attention token হিসাবে।
উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স কম্পিউটারের সাথে ব্রাউজারটি আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য available।
৫. ভিভালদি (Vivaldi) ব্রাউজার:
Vivaldi browser মূলত একটি প্রাইভেসি কেন্দ্রিক ব্রাউজার। এটি ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম তৈরি হয়েছিল। এই ব্রাউজারের প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আপনি এই ব্রাউজারটিকে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারেন। এটি উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স কম্পিউটারের জন্য available।
৬. ডাকডাকগো (Duck Duck Go):
ডাকডাকগো মূলত একটি সার্চ ইঞ্জিন। তবে এটি একটি প্রাইভেট ইন্টারনেট ব্রাউজার হিসেবেও পরিচিত। এটি আপনা থেকেই সমস্ত অনলাইন ট্রাকিং প্রতিহত করে। আপনারা যারা প্রাইভেসি ফোকাস তারা এই ডাকডাকগো অনায়েসে ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্রাউজারটির আরেকটি বিষয় হলো এটি একটি সিকিউরিটি ফিচার। আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হিস্ট্রি কোন কিছুই ডাকডাকগো নিজের কাছে জমা করে রাখেনা। বর্তমানে ডাকডাকগো Android iOS এর জন্য available।
৭. সাফারি (Safari):
Apple ব্যবহারকারীদের জন্য সাফারি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রাউজার। অ্যাপেলের তরফ থেকে সাফারি হল সর্বপ্রথম ওয়েব ব্রাউজার যেটি iphone ipad apple watch এ সমস্ত ডিভাইসে সাপোর্ট করে। ব্রাউজারটির বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটির built-in applied সাপোর্ট এবং ব্রাউজিং হিস্টরি সিন্স ইত্যাদি। ব্রাউজারটির কিছু কিছু দুর্বল দিক হলো সীমিত কাস্টমাইজেশনের অপশন।
৮. ফায়ারফক্স (Firefox):
ফায়ারফক্স অনেকেই মজিলা ফায়ারফক্স বলে থাকেন। এটি অনেক পুরাতন ওয়েব ব্রাউজার এবং ২০০২ সাল থেকে মার্কেটে রয়েছে। এই ব্রাউজারটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো অসংখ্য লাইব্রেরী এবং উইন্ডোজের হ্যালো অথেন্টিকেশন।
বর্তমানে ফায়ারফক্স উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড সমস্ত প্রকার ডিভাইসের জন্য available।
৯. Opera ব্রাউজার:
Opera browser ১৯৯৬ সালে প্রথম এসেছিল এরপর এটি বেশ জনপ্রিয় হয়। এই ব্রাউজার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাপোর্ট করে এই সমস্ত মিডিয়াগুলো আপনার ব্রাউজার থেকেই ব্যবহার করার সুযোগ দেয় addon হিসাবে।
এছাড়া কাস্টম ওয়ালপেপার, অপেরা ইউএসবি টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অপেরা ইউএসবি কোন অপেরার একটি ক্ষুদ্র ভার্সন যেটিকে যে কোন ইউএসবি ড্রাইভ থেকে আপনি আপনার কম্পিউটারে চালাতে পারেন।
তাই আপনি যদি light version ভালো মানের ওয়েব ব্রাউজার এর খোঁজ করে থাকেন তবে অপেরা ইউএসবি আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে।
No comments:
Post a Comment