হ্যাল এলরড। তিনি ক্যামেরিনো, ক্যালিফর্নিয়ায় ১৯৭৯ সালে ৩০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন আমেরিকান লেখক, স্পিকার এবং সফল প্রশিক্ষক। তিনি 'The Miracle Morning' সিরিজের লেখক। হ্যাল এলরডের বয়স যখন ২০ বছর তখন তিনি একটি ভয়ংকর অটোমোবাইল দূর্ঘটনায় আহত হন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখ একটি গাড়ি হ্যাল এলরডের গাড়ি কে সজরে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনাটিতে তার শরীরের এগারো টি হাড় ভেঙে যায় এবং তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ছয় মিনিট পর পুনরায় তার হার্টবিট শুরু হয়। তিনি ছয় দিন পর্যন্ত কোমায় ছিলেন। সপ্তম দিন তার জ্ঞান ফিরে এবং ডাক্তার তাকে জানাই তিনি কখনো চলাফেরা করতে পারবেনা। কিন্তু হ্যাল এলরড জীবনের কাছে হার মানেনি। এই ঘটনার কয়েক বছর পর হ্যাল এলরড একজন পেশাদার বক্তা, জনপ্রিয় লেখক এবং আলট্রা ম্যারাথন দৌড়বিধ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেকটা মৃত্যুর পর তিনি আবার বেঁচে উঠেন এবং ডাক্তারের সকল অনুমানকে মিথ্যে প্রমাণিত করে আজ তিনি এ অবস্থানে পৌঁছান।
হ্যাল এলরড বলেন এর জন্য সবচাইতে প্রথমে আপনাকে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
কোমা থেকে ওঠার পর তিনি ছয়টি প্রাত্যহিক অভ্যাস করেছিলেন যা তার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। যেগুলো তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। এইসব তিনি শিখেছিলেন বিভিন্ন বই পড়ে এবং অন্য সব সফল মানুষদের জীবনী থেকে। হ্যাল এলরড তার সর্বাধিক বিক্রিত বই 'The Miracle Morning' এ তার এই সব অভ্যাসের কথা বর্ণনা করেন যা তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করতেন।
এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করে আপনিও একজন সফল মানুষে পরিণত হতে পারেন।
এই ছয়টি অভ্যাস খুবই কার্যকরী ছিল তাই হ্যাল এই অভ্যাসগুলো প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। যখন তিনি এগুলো শুরু করেছিলেন তখন তার ১৫ হাজার ডলার ধার ছিল, নিজের বাড়িটিও বিক্রি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি একদম স্বাস্থ্যহীন এবং বিষন্ন ছিলেন। এই ছয়টি সকালের অভ্যাস নিয়মিত শুরু করার পর দুই মাসের মধ্যে তার উপার্জন দ্বিগুণ হয়ে যায়। নিজের বাড়িটি বিক্রির হাত থেকে বাঁচান। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে আলট্রা মেরাথন দৌড়বিদ হন এবং একজন সুখী মানুষও হন। সেই ব্যক্তিটি যাকে ডাক্তার বলেছিল কখনো চলতে পারবে না। এসব এত তাড়াতাড়ি হয়েছিল যে হ্যাল এলরড নিজেই অবাক হয়ে যান। তাই তিনি বইটির নাম রাখলেন 'The Miracle Morning' যার অর্থ দাঁড়ায় 'অলৌকিক সকাল'। কারণ তার কাছে এগুলো অলৌকিকই মনে হচ্ছিল।
হ্যাল এলরড পাঠকদের প্রতিদিনের স্বাভাবিকের চেয়ে এক ঘণ্টা আগে উঠতে উৎসাহিত করেন।
হ্যাল এলরড তার 'The Miracle Morning' বই এ বলেছেন, তিনি গবেষণা করে দেখেছেন সফল লোকেরা দৈনিক ছয়টি কাজের একটি কাজ অন্তত করেন। এগুলোকে তিনি নাম দিয়েছেন:
S.A.V.E.R.S
অর্থাৎ -
এস (S)- Silence বা মেডিটেশন
মানে প্রার্থনা, ধ্যান যা মস্তিষ্ককে শিথিল করে দিনের ভালো একটা শুরু দেয় এবং মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম করে দেয়। প্রথমে লেখকের মনে হতো মেডিটেশন বা প্রার্থনা একটি ধর্মীয় ব্যাপার মাত্র যার সাথে সফলতার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি গবেষণা করে এবং সফল মানুষদের জীবনী পড়ে জানতে পারেন এটি এমন একটি হাতিয়ার যা সফল মানুষদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।
এ (A)- Affirmation বা নিশ্চিতকরণ
এই কাজটি আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য লিখেও করতে পারেন। তিনটি কথা আপনি লিখতে পারেন:
১. আপনি আপনাকে কেমন দেখতে চান?
২. আপনি এই পরিবর্তনগুলো কেন চান?
৩. এই কাজগুলো করার জন্য আপনি কি কি অঙ্গীকার করেছেন?
এই কথাগুলো একটি ডাইরিতে লিখুন এবং প্রতিদিন সকালে পড়ুন।
ভি (V)- Visualisation বা নিজের স্বপ্নগুলো ভাবা
তৃতীয়টি হচ্ছে নিজের কল্পনা শক্তির ব্যবহার। নিজের সাথে কথোপকথন এবং কল্পনা শক্তির ব্যবহার এই দুইটি যেন জমজ ভাই বোনের মত। আপনার মনে হতে পারে এই দুটি একই বিষয়। কিন্তু আসলে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কথোপকথন সাহায্য করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গুলোকে মনে রাখতে এবং শেষ ইচ্ছা গুলো কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। ধরুন কল্পনা হচ্ছে একটি দৃশ্য এবং কথোপকথন হচ্ছে তার ধ্বনি বা আওয়াজ।
ই (E)- Exercise বা ব্যায়াম করা
চতুর্থ অভ্যাস হচ্ছে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা। আমরা সবাই জানি শরীরচর্চা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। কিন্তু আমরা প্রায় সব মানুষই এটিকে এড়িয়ে চলি। যে কোন সাধারণ ব্যায়ামও হতে পারে। ২০ থেকে ২১ দিন একটু কষ্ট করে সকাল সকাল উঠলে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। সকালে ব্যায়াম করার অনেক বৈজ্ঞানিক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন যায় এবং এটি মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন রস নিঃসরণ করে।
আর ( R )- Reading বা পড়া
পঞ্চম অভ্যাস কি হচ্ছে পড়াশুনা করা। যেকোনো ভালো বইয়ের একটা চ্যাপ্টার পড়া। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য পড়াশুনা সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। প্রতিদিন সকালে অন্তত দশ পৃষ্ঠা বই পড়ার চেষ্টা করা। এই হিসাবে বছর শেষে ৩৬৫০ পৃষ্ঠা পড়া হবে যেটি প্রায় ১৭-১৮ টি বইয়ের সমান। সত্যিই দেখুন একটি ছোট প্রতিজ্ঞা আপনার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এস (S)- Scribing বা লিখা
ষষ্ঠ এবং শেষ অভ্যাসটি হলো লেখা। নিজের স্বপ্নগুলো বা দৈনিক কি কাজ করতে হবে তা লিখে রাখা। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট ব্যয় করতে হবে চিন্তা এবং আবেগগুলো লিখতে। এটি থেকে প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখবেন। ইংরেজিতে এটি কে বলে 'morning page' বাংলায় বলা যায় 'ভোরের পত্র'। হ্যাল এলরড এই পত্রটিকে দুই ভাগে লিখতেন। প্রথম ভাগে 'আজকের শিক্ষা' অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কি কি শিখেছি আর কি কি পেয়েছি এবং দ্বিতীয় ভাগে লিখতেন 'নতুন পরিকল্পনা' অর্থাৎ আরো নতুন কি শিখতে হবে বা আরো কি করতে হবে এই প্রক্রিয়াটি হ্যাল কে লক্ষ্যে অটুট থাকতে সাহায্য করেছিল।
এই প্রাত্যহিক কার্যকলাপ অনুসরণ করার জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে ভরে ঘুম থেকে উঠা। আর এইসব নিত্যকর্ম সকাল আটটার মধ্যে শেষ করতে হবে। যেমন "The Miracle Morning" এই বইটির বিকল্প শিরোনাম হলো, সকাল ৮:০০ টার আগে ৬ টি অভ্যাস যা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করবে।
Summary (সারসংক্ষেপ)
আপনি কি প্রস্তুত জীবনকে পরের ধাপে উন্নীত করার জন্য? আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনের পরবর্তী ধাপ কোনটা? জীবনের ঠিক কোন পরিবর্তন আপনি সেই ধাপে উন্নীত হবেন? একদিন একদিন করে শুরু করুন আপনার অতীত যাই হোক না কেন আপনি আপনার ভবিষ্যত পরিবর্তন আনতে পারবেন বর্তমানকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে। বর্তমান আপনার অতীতের কর্মফলের প্রতিচ্ছবি। ঠিক তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে আপনি কি হতে চান সে ব্যাপারে এই মুহূর্তের সিদ্ধান্তের ওপর। এই মুহূর্তটা আপনার পরবর্তী দিনের সুখ, স্বাস্থ্য, সম্পদ, সাফল্য যা আপনার প্রাপ্য তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে অপেক্ষা না করে শুরু করুন। আগামীকালই হোক সেই স্মরণীয় দিন যেদিন আপনি এত দিনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের যাত্রা শুরু করবেন।
No comments:
Post a Comment