Wednesday, March 8, 2023

ফেসবুক পিক্সেল কি? কিভাবে ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করবেন?

 ফেসবুক পিক্সেল কি? (What is Facebook Pixel)


আমরা যারা অনলাইন বিজ্ঞাপনের সাথে জড়িত আছি তাদের মোটামুটি Google Analytics সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। গুগলের এই ফ্রি টুলটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আমাদের ওয়েবসাইটে কতজন ভিজিটর রয়েছে আর তারা কোন এলাকা থেকে এসেছে, তাদের বয়স কত ইত্যাদি। তবে এটুকু ধারণা দিয়ে আমরা ব্যবসাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। এর পাশাপাশি জানতে হবে এই ভিজিটররা ওয়েবসাইটে এসে ঠিক কি করছে? কোন পণ্যটি বেশি পছন্দ করছে এবং কোন বয়সের ভোক্তা কোন পণ্য ক্রয় করছে এমন বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে পেতে পারবো। ফেসবুক পিক্সেল মূলত একটি টুলস যা ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরা কি করছে তার ট্র্যাক করে একটি analytics report জেনারেট করতে পারবেন।


ফেসবুকের এই আপডেটটি সম্পর্কে এখনো অনেকেই তেমন একটা না জানলেও চমৎকার এই টুলস টি ব্যবহার করে ব্যবসার অনেক বেশি প্রসার করা সম্ভব। এছাড়া বর্তমান অনলাইন বিজ্ঞাপন অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম হলো social media marketing


যারা ফেসবুক বুষ্টের মাধ্যমে আর আগের মত সেল পাচ্ছেন না, তারা এই ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করে দেখুন। আমরা অনেকেই ফেসবুকে শুধু একটা পোস্ট দিয়ে দেই অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দিয়ে মনে করি কাজ শেষ। এতে যে একদম সফলতা আসে না তা কিন্তু নয় তবে এসব ফেসবুকের ক্যাম্পেইন গুলো আরো অনেক বেশি কার্যকর করা যায় ফেসবুক পিক্সেলের ব্যবহার করে। বড় বড় মার্কেটর দের বিজ্ঞাপন গুলোর সফলতার অন্যতম গোপন রহস্য হলো এই ফেসবুক পিক্সেল। আপনি যদি একজন মার্কেটার নাও হয়ে থাকেন তবুও এই পিক্সেলের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা কে আরও অনেক বেশি লাভজনক করে গড়ে তুলতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপন বা বুষ্টের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারবেন।


নাম পিক্সেল কেন রাখা হলো?


পিক্সেল শব্দটা শুনে হয়তো অনেকে ভেবে থাকেন এটি মূলত ছবি এই রিলেটেড কিছু একটা সাথে সম্পৃক্ত। ধারণাটি কিছুটা হলেও ঠিক। ফেসবুক পিক্সেল ওয়েবসাইটের এক পিক্সেল সমপরিমাণ জায়গা দখল করে নেয়। আর সেই জায়গা থেকে প্রত্যেকবার যখন ইমেজ লোড হতে থাকে, যাবতীয় তথ্যাবলী আপনার ফেসবুকের এড ম্যানেজারের মাধ্যমে সংগৃহীত হতে থাকে।


পিক্সেলের সংগৃহীত তথ্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?


আপনি বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ হন অথবা নিজের ব্যবসার মালিক হন, আপনার কাছে তথ্য এবং উপাত্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন আপনি মিষ্টি বিক্রয় করেন, এখন ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজের ব্যবসার প্রসার করতে চাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন আর সেখান থেকে বিক্রয়ও হচ্ছে, কিন্তু দিনশেষে দেখা যাচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপন খরচ আর লাভের পরিমাণ একই। এখন কি করবেন? ঠিক এখানেই আসে ফেসবুক পিক্সেলের ভূমিকা। ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সেটার যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। ধরুন আপনি জানতে পারলেন যে ১৬-২৫ বছর বয়সী কেউ আপনার পণ্য তেমন একটা ক্রয় করছে না। ২৬-৩৫ বছর বয়সীরা পন্য বেশি ক্রয় করছে। আর তারা বেশিরভাগই ঢাকার অধিবাসী। তাহলে তো আপনার ১৬-২৫ বছর বয়সীদের কাছে বিজ্ঞাপন দেয়ার প্রয়োজন নেই। এই অতিরিক্ত খরচটি কমিয়ে নিয়ে এসে, সেই বিজ্ঞাপনের টাকা ২৬-৩৫ বছর বয়সীদের কাছে বেশি পৌঁছে দিতে পারবেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনার পণ্যের বিক্রয়ও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।


আবার দেখা গেল এই ২৬-৩৫ বছর বয়সীদের বেশিরভাগ মানুষই কেবল শুক্রবার এবং শনিবার আপনার পণ্যটি ক্রয় করছে। এখন রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার এর বাড়তি বিজ্ঞাপন খরচটিও যদি আপনি শুক্রবার এবং শনিবারের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রয় আরো বৃদ্ধি হবে। ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি এই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং আপনার কনজিউমার দের যাবতীয় তথ্য গুলো খুব সুন্দর সাজানো গোছানো অবস্থায় পেয়ে যাবেন এই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপনের খরচ বাদ দিয়েও অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন।


ফেসবুক পিক্সেলের কাজ কি?


ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি নিজের করা বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন গুলোকে আরও অনেক সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে আরো বেশি লাভজনক করে তুলতে পারবেন ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আরো যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পাবেন-


  • কে ক্রয় করছে, কখন ক্রয় করছে ইত্যাদি তথ্য পাবেন।
  • কতজনের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছেছে আর তাদের মধ্যে কয়জন ক্রয় করেছে।
  • তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে নিজের পণ্যের জন্য আলাদা অডিয়েন্স টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
  • একটি ক্যাম্পেইন হতে প্রাপ্ত তথ্য আপনি বারবার কাজে লাগাতে পারবেন।


আপনার ভোক্তাদের হতে প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসাকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করতে পারবেন। যেমন একটু আগেই বলেছিলাম আপনি যখন দেখতে পাচ্ছেন যে ১৬-২৫ বছর বয়সী কেউ আপনার পণ্য ক্রয় করছে না, তখন সেই বয়সীদের আকৃষ্ট করার জন্য অন্য কোন পণ্য বিক্রয় করতে পারেন। এই তথ্য এবং উপাত্ত আপনাকে নতুন ভাবে ভাবার অবকাশ করে দিবে।


ফেসবুক পিক্সেল কিভাবে ইন্সটল করতে হয়?


প্রত্যেকটি পিক্সেল অন্য পিক্সেল থেকে একদমই ভিন্ন হয়ে থাকে এবং প্রত্যেকটির আলাদা আইডি নাম্বার দেয়া থাকে। যাতে করে একটির তথ্য অন্য পিক্সেলের তথ্যের সাথে মিক্স না হয়ে যায়।


প্রথম পিকসামটি তৈরি করার জন্য প্রথমে ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজারে লগইন করতে হবে। উপরের ডানদিকে মেনু বাটনে ক্লিক করে এবং ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে "pixels" লেখাটির উপর ক্লিক করতে হবে। তাহলে একটি উইন্ডো ওপেন হবে, যেখানে এই পিক্সেল তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারবেন।


এখানে "create a pixel" লেখাটিতে ক্লিক করুন। এরপর আরেকটি উইন্ডো চলে আসবে সেখানে আপনার পিক্সেলের নাম অর্থাৎ নিজে বোঝার সুবিধার্থে আপনি এই পিক্সেলটির যে নাম রাখতে চান সেটা দিন এবং আপনার ওয়েবসাইটের url দিয়ে দিন।


আপনি যখনই নাম আর url দিয়ে ডানপাশের নিচের "create" বাটনে ক্লিক করবেন সাথে সাথেই ফেসবুক আপনার জন্য একটি স্নিপেড কোড তৈরি করে ফেলবে। এখন আপনাকে এই কোডটি আপনার ওয়েবসাইটে প্লেস করতে হবে, যাতে ফেসবুক পিক্সেল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটে পিক্সেল কোডটি তিন ভাবে প্লেস বা ইন্সটল করতে পারবেন:


১/ আপনি নিজেই এই কাজটি করতে পারেন।


২/ বিস্তারিত একজন ডেভলপারকে দিতে পারেন, যাতে তিনি কোডটি আপনার ওয়েবসাইটে প্লেস করে দেন।


৩/ Google tag ম্যানেজারের সাথে আপনার ফেসবুক একাউন্টটি কানেক্ট করে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার google tag ম্যানেজারকে ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেস দিতে হবে।


আপনি নিজে যদি facebook pixel ইন্সটল করতে চান তাহলেও দুই পদ্ধতিতে আপনি কাজটি করতে পারবেন।


প্রথমত আপনি যদি wix, Squarespace, Weebly এর মত ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেখানে আপনি ফেসবুক পিক্সেল কোড প্লেস করার জন্য অপশন পাবেন। সেখানে আপনি জাস্ট ফেসবুক পিক্সেলের কোডটি প্রবেশ করে "save" বাটনে ক্লিক করে দিবেন। আর কিছু করতে হবে না।


তবে আপনি যদি আরেকটু জটিল কোন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করেন, যেমন নিজস্ব কাস্টম ভাবে কোড করে ওয়েবসাইট তৈরি করেন অথবা ওয়ার্ডপ্রেসের মতো ওয়েবসাইট বিল্ডার নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনাকে একটু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে।


ফেসবুক পিক্সেলের কোড কপি করার সেই জায়গায় একটি অপশন পাবেন সেখান থেকে স্ক্রিপ্টটি আপনাকে কপি করে নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটের HTML এর হেডার ট্যাগ এর মধ্যে এই স্ক্রিপ্টটি কপি পেস্ট করে দিতে হবে। অতঃপর আপনার ওয়েবসাইটের এডিটর সেভ করে নিতে হবে।


ওয়েবসাইটে ফেসবুক পিক্সেল সেটাপ করে নেওয়ার পর আপনি যে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে চান তার উপর একটি করে ইভেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন যদি বিক্রয়ের তথ্য চান তাহলে আপনাকে বিক্রয়ের উপর ইভেন্ট তৈরি করতে হবে। এভাবে আপনি লোকেশন, যোগাযোগ, সার্চ, পেজ ভিউ ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহের জন্য আলাদা করে ইভেন্ট তৈরি করে নিবেন।


এই ধরনের ইভেন্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:


স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট

কাস্টম ইভেন্ট


স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট কিভাবে সেট-আপ করতে হয়


যদি wix, Squarespace এর মতো ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেখানে খুব সহজেই ইভেন্ট তৈরি করার এমন অপশন পেয়ে যাবেন। তবে, যদি ওয়ার্ডপ্রেস বা কাস্টম ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন তাহলে এই ইভেন্ট তৈরি করার জন্য ফেসবুক হেল্প সেন্টারের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। পিক্সেল রিলেটেড ফেসবুক হেল্প সেন্টারে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টের জন্য আলাদা সিঙ্গেল লাইন কোড রয়েছে। সেই কোডটি আপনি জাস্ট আগের কোডের মধ্যে কপি পেস্ট করে দিবেন।


কাস্টম ইভেন্ট কিভাবে তৈরি করতে হয়


আপনি যদি স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের বাইরেও অন্য কিছু ট্র্যাক করতে চান তাহলে কাস্টম ইভেন্ট ব্যবহার করতে হবে। আর কাস্টম ইভেন্ট আপনার ওয়েবসাইটের খুব কম তথ্যই ফেসবুকের সাথে শেয়ার করে থাকে। আপনার কাছে নিজের ওয়েবসাইটের প্রাইভেসি যদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যু হয়ে থাকে তাহলে কাস্টম ইভেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।


তবে স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট এর মত কাস্টম ইভেন্ট অতটা সহজ নয় বরং এই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন ডেভেলপার অথবা কোডিং এক্সপার্ট এর সাহায্য নিতে হবে। একদম ইউনিক ভাবে তৈরি করা কোডের মাধ্যমে এই কাস্টম ইভেন্ট তৈরি করে নিতে হয়। যার জন্য আপনাকে ফেসবুক পিক্সেল রিলেটেড অনেক এডভান্স লেভেলের কোডিং সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।


তবে তাৎক্ষণিকভাবে যদি কোন ডেভলপার না থাকে, তাহলে আপনি গুগল ট্যাগ ম্যানেজারের মাধ্যমেও ফেসবুক পিক্সেল সেট-আপ করে নিতে পারেন। কিভাবে একটি কাস্টম ইভেন্ট তৈরি করতে পারবেন সেই প্রসেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুগল ট্যাগ ম্যানেজার এর মধ্যে পেয়ে যাবেন।


সম্পূর্ণ সেট আপ প্রসেসটি শেষ করে ফেলার পর Facebook Pixel Helper Chrome Extension এর মাধ্যমে সেই পিক্সেলটি কাজ করছে কিনা সেটা দেখে নিতে পারেন।


এই এক্সটেনশন এর মধ্যে সিগনাল পাবেন। যদি আপনাকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয় তাহলে বুঝতে হবে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এখন ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে চমৎকার সব তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।


পরিশেষে, আপনি যদি একদম কোডিং রিলেটেড অনেক এক্সপার্ট কেউ না হয়ে থাকেন তাহলে স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের মাধ্যমেই ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের মাধ্যমে কিন্তু জরুরি প্রায় সব ধরনের তথ্য এবং উপাত্তই সংগ্রহ করা যায়। নিজের ব্যবসার প্রচার এবং প্রসারের জন্য ফেসবুক পিক্সেল বর্তমানে খুব চমৎকার একটি মাধ্যম। 


আর প্রযুক্তির এই সময়ে প্রযুক্তিকে আর অবহেলা নয়। 

নিজের সমৃদ্ধির জন্যই #ডিজিটাল_মার্কেটিং শিখুন এবং ব্যবসার সুদূর প্রসারী ফলাফল উপভোগ করুন। 










No comments:

Post a Comment

মোটিভেশনাল গল্প

একটি শহরে এক ধনী ব্যক্তি ছিল, ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থ সম্মান কোনো দিক থেকেই তার কোনো কমতি ছিলো না, সকল প্রকার সুখ সম্পত্তি ছিল তার নিত্য নৈমিত্...