Monday, May 8, 2023

মোটিভেশনাল গল্প

একটি শহরে এক ধনী ব্যক্তি ছিল, ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থ সম্মান কোনো দিক থেকেই তার কোনো কমতি ছিলো না, সকল প্রকার সুখ সম্পত্তি ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক জীবনের সঙ্গী। কিন্তু হটাৎ করে এক সময়ে তার এই বিলাস বহুল জীবন কোনো এক ঘটনা চক্রে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, এবং সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ব্যবসা সব কিছু হারিয়ে যায়। যা কিছু এতদিন ধরে উপার্জন করেছিল সব কিছুর সমাপ্তি ঘটে। এমন অবস্থায় সে মনের দিক দিক থেকে একেবারে বিষাদ গ্রস্থ হয়ে পড়ে, আর মনে মনে ঠিক করে ফেলে এ জীবন আর রেখে লাভ কি, মরে গিয়ে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে পড়ে‌।


একদিন সে শহরের বাইরে জনবহুল এলাকা ছেড়ে অনেক উঁচু পাহাড়ের উপরে ওঠে এবং সেখান থেকে সে জীবন দিয়ে মুক্তি পাবে বলে প্রস্তুত হয়ে পড়ে, আর তার এই ঘটনা কোনো এক মহান ব্যাক্তি লক্ষ্য করেন, আর তাকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কেনো এই পথ বেছে নিলেন, তখন ঐ ব্যাক্তি তার জীবনের সব ঘটনা বলেন। একটা সময় ছিলো যখন আমি অনেক প্রভাবশালী আর অনেক ধন সম্পত্তির মালিক ছিলাম, কিন্তু এখন আমার কাছে তার আর কিছুই নেই, জীবন শূন্য হয়ে গেছে, আর এই জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে তাই আমার আর এই জীবনের ভার বহন করার ক্ষমতা নেই, আর আমি তাই এই পথ বেছে নিয়েছি।


ঐ মহান ব্যাক্তি তার সব কথা শোনার পর তাকে বললেন, তুমি কেবল তোমার অর্থ সম্পত্তিকে হারিয়েছ তোমার জীবন এখনো তুমি হারাওনি, অর্থ রোজকার করার দক্ষতা সেদিনও তোমার কাছে ছিলো আর আজও আছে। সময় কখনো এক রকম থাকেনা কাল সহজ ছিলো আজ কঠিন, আর বিশ্বাস রাখো নিজের উপর তুমি চাইলে তোমার জীবনের সকল সমস্যার সমাধান তুমি নিজেই করতে পারবে, তোমার জীবন আবার সহজ হয়ে উঠবে। বিশ্বাস হলো কঠিন সময়ের সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার, আর নিজের উপর আস্থা সকল সমস্যার অবসান ঘটাতে পারে, মানুষের জীবনে সমস্যা আসে তার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য, সমস্যা মানুষকে আরও কঠিন ও অভিজ্ঞ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই নিজের উপর এক বুক বিশ্বাস নিয়ে ফিরে যাও সেই শহরের ভিড়ে, যেখানে তুমি সব হারিয়ে এসেছো সেখান থেকেই আবার নতুন করে শুরু করো, আর নিজের পরিশ্রম এর সব টুকু উজাড় করে দাও, তুমি আবার পারবে কারণ তুমি হেরেছ যতটুকু তার থেকে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ, আর অভিজ্ঞ ব্যাক্তির কাছে কোনো কাজই কঠিন নয়।


ঐ মহান ব্যাক্তির কথা শুনে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলা লোকটা আবার নতুন করে বাঁচার, স্বপ্ন দেখার ও তার বানিজ্য শুরু করার সুযোগ এবং সাহস পেলো, আর মনে মনে ভাবলো ঠিকই তো আমি তো কেবল আমার ধন সম্পত্তি হারিয়েছি, নিজেকে তো হারাইনি, আর হারানোর পেছুনে যেটুকু সময় ব্যয় হোয়েছে তার বেশি সময় এখনো আমার সামনে অপেক্ষা করছে। আর সে আরোও ভাবলো আমার সকল অর্থ ও টাকা আমার দ্বারা হয়েছিলো, টাকা ও অর্থের জন্য আমি হইনি, অর্থ আমার পরিচয় নয় আমার পরিচয় আমি নিজেই। সে নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করলো নিজের পরিশ্রম ও মনোবল তাকে আবার ধনবান ব্যাক্তি করে তুললো।


এই কাহিনী আমাদের একটাই শিক্ষা দেয় সময় ও পরিস্থিতি যতোই খারাপ হোক না কেন, কোন এক সময় তা ঠিকই বদলাবে, যদি কখনো আপনার জীবনে সমস্যা আসে তাহলে ঐ সময়ই হলো নিজেকে চিনে নেয়ার ও নিজের ক্ষমতা ও নিজেকে বুঝে নেয়ার, নিজের সমস্যাকে ভয় না পেয়ে তার সম্মুখীন হতে হবে।





Thursday, March 23, 2023

স্কিল ডেভেলপমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ কেন?

 স্কিল ডেভেলপমেন্ট কেন গুরুত্বপূর্ণ?


বর্তমান যুগে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ছাড়া জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা কঠিন। প্রযুক্তি উন্নয়নের সাথে সাথে প্রতিযোগিতাও দিন দিন বাড়ছে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। যে যত বেশি স্কিল ডেভেলপ করবে, কর্মক্ষেত্রে সে তত এগিয়ে থাকবে।


বর্তমান সময়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরও বেশিরভাগ মানুষ বেকার। একাডেমিক পড়াশোনার সাথে ভালো কোন স্কিল না থাকায় অনেকে চাকরি পাচ্ছে না, অথবা পেলেও অল্প বেতনে কাজ করছে।


আমরা সবাই ভালো একটি ভবিষ্যৎ চাই। নিজের পছন্দের ক্যারিয়ারে যেতে স্কিল ডেভেলপমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। বিশেষ করে প্রতিযোগিতার বর্তমান যুগে যোগ্যপ্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা যত বাড়াতে পারবেন, ততই আপনার কাজের পরিধি বাড়ানো সম্ভব হবে।


বিভিন্ন কোম্পানি তাদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ লোক পাচ্ছে না। আর তাই তারা অন্য দেশের দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ করছে। সেই কারণে দেশের অনেক মানুষ বেকার থেকে যাচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, তাছাড়া বেশিদূর যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ,


👉 Chang is not an option, change is mandatory.


ধরুন, আপনি লিখতে ভালোবাসেন, কনটেন্ট লিখেন। কিন্তু অন্য আরেকজন লেখার সাথে সাথে লেখাটি SEO friendly করে লিখতে পারে। এখন জব মার্কেটে উনি আপনার চেয়ে গিয়ে থাকবে শুধু তার একটি স্কিল এর জন্য। কারণ তার লেখা মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ।


আমরা পিছিয়ে আছি কেন?


আমাদের পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ হলো আমরা অন্যের অর্জন দেখে অনুপ্রাণিত হয়, কিন্তু আমরা চিন্তা করে দেখি না তারা কিভাবে সেই সাফল্য অর্জন করেছে। সমালোচনা না করে নিজের স্কিন ডেভেলপ করতে হবে। কারণ কষ্ট করলেই সাফল্য আসবে।


পিছিয়ে থাকার আরেকটি কারণ হলো আমরা নিজেদেরকে অবহেলা করি। যে কোন কিছুর জন্য সময় দিতে হবে। সকল বিষয় নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করতে হবে। এতে করে আপনার আগ্রহ কোন বিষয় নিয়ে সেটি জানতে পারবেন। এরপর সেই বিষয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য এগিয়ে যেতে হবে।


কি কি স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন?


অনেক ধরনের স্কিল রয়েছে আপনি আপনার কাজ বা ইন্টারেস্ট এর উপর নির্ভর করে স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন। বর্তমান যুগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কিছু টেকনিক্যাল স্কিল জানা থাকলে কর্মক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যে সকল বিষয়ে স্কিল ডেভেলপ করতে পারেন-


  • ডিজিটাল মার্কেটিং

  • এসইও

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন

  • ওয়েব ডিজাইন

  • ভিডিও এডিটিং

  • কন্টেন্ট রাইটিং

  • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

  • গেম ডেভলপমেন্ট


এইসব স্কিল গুলোর মধ্যে যদি যেকোনো একটি সেক্টর নিয়ে আপনার স্কিল ডেভেলপ করেন, তাহলে কর্ম ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন। এছাড়াও যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলেও অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন।


কর্ম ক্ষেত্রে যদি ভালো অবস্থান তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে। আপনি যখন কর্ম ক্ষেত্রে যাবেন, অনেক মানুষের সাথে আপনার কথা বলতে হবে। আপনার দক্ষতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। যে প্রধান দুইটি জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে-


  • Fluent English speaking

  • Presentation skill,


ধরুন, আপনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো পোস্টে আছেন। সেখানে দেশি-বিদেশে অনেকের সাথে আপনাকে কাজ করতে হবে এবং সবার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। একজন বিদেশী এমপ্লয়ীর (Employee) সাথে যখন আপনি কথা বলবেন আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আপনি যদি ভালো ইংরেজি বলতে পারেন এবং প্রেজেন্টেশন স্কিল ভালো হয় আপনি অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন। কারণ তখন বাহিরের মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য কোন বাধা থাকবে না।


এছাড়াও বেশ কিছু কর্পোরেট স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে পারেন। যা করলে আপনি জব সেক্টরে অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকবেন। যেমন:-


  • Microsoft Office

  • Excel

  • Accounting related software (QuickBooks, Tally)


বর্তমানে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তাই এসব যদি আপনি আগে থেকে শিখে রাখেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে অনেক সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও সৃজনশীল দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শিখতে পারেন creative skill development. এইসব স্কিল এর মধ্যে রয়েছে-


  • লিখালিখি

  • স্কেচ

  • ফটোগ্রাফি

  • সিনেমাটোগ্রাফি

  • ইন্সট্রুমেন্ট


কোনটি আগে শুরু করবেন?


আপনি যখন চাকরির জন্য আবেদন করবেন, তখন অবশ্যই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করবেন।

আপনি যদি ফ্রেশার হন, তাহলে আপনার জন্য ডাক পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ কেউই ফ্রেশার নিয়োগ দিতে চায় না। তবে নিয়োগকারী যদি দেখে যে ফ্রেশার হওয়ার পরও আপনার অনেক টেকনিক্যাল স্কিল রয়েছে, তখন অবশ্যই আপনাকে কল করবে। তাই ফ্রেশারদের জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।




এখন শুরু করার আগে ভাবতে হবে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ। কোন বিষয়ে আপনার আগ্রহ আছে এবং কোন বিষয়ের উপর ক্যারিয়ার গড়তে চান। এর উপর ভিত্তি করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে।


যদি আপনার নতুন কিছু করার ইচ্ছা থাকে এবং এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনি #ডিজিটাল_মার্কেটিং, SEO, Graphic Design এই সকল কোর্সগুলো করতে পারেন। চাইলে কোর্স করে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারেন।


আর যদি চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকতে চান তাহলে একাউন্টিং রিলেটেড সফটওয়্যার (QuickBooks, Tally), Microsoft Office, Excel শিখতে পারেন।


আর যদি নিজের passion থেকে কিছু করতে চান তাহলে লেখালেখি, স্কেচ, ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি এইসব skill develop করতে পারেন।


যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে-


সর্বপ্রথম যে বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হচ্ছে ধৈর্য ধরতে হবে। শেখার আগ্রহ থাকতে হবে, তা না হলে অনেক সমস্যা ফেইস করতে হবে। এরপর ঠিক করতে হবে আপনি কোন সেক্টরে আগ্রহী। তাছাড়া যতই চেষ্টা করুন না কেন, কোন লাভ হবে না।


শেষ কথা-


সর্বশেষ যে কথা মাথায় রাখতে হবে, তা হল অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। লক্ষ্য ঠিক না করলে সঠিক পথে আগানো যায় না। যাই করুন না কেন সময় নিয়ে করুন। অল্পতে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। সফলতা সহজে আসে না, এর জন্য চেষ্টা করতে হয়। তবে চেষ্টা করলে সাফল্য অবশ্যই আসবে।





Wednesday, March 8, 2023

ফেসবুক পিক্সেল কি? কিভাবে ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করবেন?

 ফেসবুক পিক্সেল কি? (What is Facebook Pixel)


আমরা যারা অনলাইন বিজ্ঞাপনের সাথে জড়িত আছি তাদের মোটামুটি Google Analytics সম্পর্কে ধারণা রয়েছে। গুগলের এই ফ্রি টুলটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারি আমাদের ওয়েবসাইটে কতজন ভিজিটর রয়েছে আর তারা কোন এলাকা থেকে এসেছে, তাদের বয়স কত ইত্যাদি। তবে এটুকু ধারণা দিয়ে আমরা ব্যবসাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো না। এর পাশাপাশি জানতে হবে এই ভিজিটররা ওয়েবসাইটে এসে ঠিক কি করছে? কোন পণ্যটি বেশি পছন্দ করছে এবং কোন বয়সের ভোক্তা কোন পণ্য ক্রয় করছে এমন বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে পেতে পারবো। ফেসবুক পিক্সেল মূলত একটি টুলস যা ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরা কি করছে তার ট্র্যাক করে একটি analytics report জেনারেট করতে পারবেন।


ফেসবুকের এই আপডেটটি সম্পর্কে এখনো অনেকেই তেমন একটা না জানলেও চমৎকার এই টুলস টি ব্যবহার করে ব্যবসার অনেক বেশি প্রসার করা সম্ভব। এছাড়া বর্তমান অনলাইন বিজ্ঞাপন অর্থাৎ ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম হলো social media marketing


যারা ফেসবুক বুষ্টের মাধ্যমে আর আগের মত সেল পাচ্ছেন না, তারা এই ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করে দেখুন। আমরা অনেকেই ফেসবুকে শুধু একটা পোস্ট দিয়ে দেই অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দিয়ে মনে করি কাজ শেষ। এতে যে একদম সফলতা আসে না তা কিন্তু নয় তবে এসব ফেসবুকের ক্যাম্পেইন গুলো আরো অনেক বেশি কার্যকর করা যায় ফেসবুক পিক্সেলের ব্যবহার করে। বড় বড় মার্কেটর দের বিজ্ঞাপন গুলোর সফলতার অন্যতম গোপন রহস্য হলো এই ফেসবুক পিক্সেল। আপনি যদি একজন মার্কেটার নাও হয়ে থাকেন তবুও এই পিক্সেলের মাধ্যমে আপনার ব্যবসা কে আরও অনেক বেশি লাভজনক করে গড়ে তুলতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ফেসবুক বিজ্ঞাপন বা বুষ্টের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারবেন।


নাম পিক্সেল কেন রাখা হলো?


পিক্সেল শব্দটা শুনে হয়তো অনেকে ভেবে থাকেন এটি মূলত ছবি এই রিলেটেড কিছু একটা সাথে সম্পৃক্ত। ধারণাটি কিছুটা হলেও ঠিক। ফেসবুক পিক্সেল ওয়েবসাইটের এক পিক্সেল সমপরিমাণ জায়গা দখল করে নেয়। আর সেই জায়গা থেকে প্রত্যেকবার যখন ইমেজ লোড হতে থাকে, যাবতীয় তথ্যাবলী আপনার ফেসবুকের এড ম্যানেজারের মাধ্যমে সংগৃহীত হতে থাকে।


পিক্সেলের সংগৃহীত তথ্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?


আপনি বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ হন অথবা নিজের ব্যবসার মালিক হন, আপনার কাছে তথ্য এবং উপাত্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন আপনি মিষ্টি বিক্রয় করেন, এখন ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিজের ব্যবসার প্রসার করতে চাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন আর সেখান থেকে বিক্রয়ও হচ্ছে, কিন্তু দিনশেষে দেখা যাচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপন খরচ আর লাভের পরিমাণ একই। এখন কি করবেন? ঠিক এখানেই আসে ফেসবুক পিক্সেলের ভূমিকা। ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন সেটার যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। ধরুন আপনি জানতে পারলেন যে ১৬-২৫ বছর বয়সী কেউ আপনার পণ্য তেমন একটা ক্রয় করছে না। ২৬-৩৫ বছর বয়সীরা পন্য বেশি ক্রয় করছে। আর তারা বেশিরভাগই ঢাকার অধিবাসী। তাহলে তো আপনার ১৬-২৫ বছর বয়সীদের কাছে বিজ্ঞাপন দেয়ার প্রয়োজন নেই। এই অতিরিক্ত খরচটি কমিয়ে নিয়ে এসে, সেই বিজ্ঞাপনের টাকা ২৬-৩৫ বছর বয়সীদের কাছে বেশি পৌঁছে দিতে পারবেন এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনার পণ্যের বিক্রয়ও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।


আবার দেখা গেল এই ২৬-৩৫ বছর বয়সীদের বেশিরভাগ মানুষই কেবল শুক্রবার এবং শনিবার আপনার পণ্যটি ক্রয় করছে। এখন রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার এর বাড়তি বিজ্ঞাপন খরচটিও যদি আপনি শুক্রবার এবং শনিবারের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন তাহলে আপনার বিক্রয় আরো বৃদ্ধি হবে। ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি এই ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন এবং আপনার কনজিউমার দের যাবতীয় তথ্য গুলো খুব সুন্দর সাজানো গোছানো অবস্থায় পেয়ে যাবেন এই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপনের খরচ বাদ দিয়েও অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন।


ফেসবুক পিক্সেলের কাজ কি?


ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আপনি নিজের করা বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন গুলোকে আরও অনেক সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে আরো বেশি লাভজনক করে তুলতে পারবেন ফেসবুক পিক্সেলের মাধ্যমে আরো যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো পাবেন-


  • কে ক্রয় করছে, কখন ক্রয় করছে ইত্যাদি তথ্য পাবেন।
  • কতজনের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছেছে আর তাদের মধ্যে কয়জন ক্রয় করেছে।
  • তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে নিজের পণ্যের জন্য আলাদা অডিয়েন্স টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
  • একটি ক্যাম্পেইন হতে প্রাপ্ত তথ্য আপনি বারবার কাজে লাগাতে পারবেন।


আপনার ভোক্তাদের হতে প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যবসাকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করতে পারবেন। যেমন একটু আগেই বলেছিলাম আপনি যখন দেখতে পাচ্ছেন যে ১৬-২৫ বছর বয়সী কেউ আপনার পণ্য ক্রয় করছে না, তখন সেই বয়সীদের আকৃষ্ট করার জন্য অন্য কোন পণ্য বিক্রয় করতে পারেন। এই তথ্য এবং উপাত্ত আপনাকে নতুন ভাবে ভাবার অবকাশ করে দিবে।


ফেসবুক পিক্সেল কিভাবে ইন্সটল করতে হয়?


প্রত্যেকটি পিক্সেল অন্য পিক্সেল থেকে একদমই ভিন্ন হয়ে থাকে এবং প্রত্যেকটির আলাদা আইডি নাম্বার দেয়া থাকে। যাতে করে একটির তথ্য অন্য পিক্সেলের তথ্যের সাথে মিক্স না হয়ে যায়।


প্রথম পিকসামটি তৈরি করার জন্য প্রথমে ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজারে লগইন করতে হবে। উপরের ডানদিকে মেনু বাটনে ক্লিক করে এবং ড্রপ-ডাউন মেনু থেকে "pixels" লেখাটির উপর ক্লিক করতে হবে। তাহলে একটি উইন্ডো ওপেন হবে, যেখানে এই পিক্সেল তৈরির প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারবেন।


এখানে "create a pixel" লেখাটিতে ক্লিক করুন। এরপর আরেকটি উইন্ডো চলে আসবে সেখানে আপনার পিক্সেলের নাম অর্থাৎ নিজে বোঝার সুবিধার্থে আপনি এই পিক্সেলটির যে নাম রাখতে চান সেটা দিন এবং আপনার ওয়েবসাইটের url দিয়ে দিন।


আপনি যখনই নাম আর url দিয়ে ডানপাশের নিচের "create" বাটনে ক্লিক করবেন সাথে সাথেই ফেসবুক আপনার জন্য একটি স্নিপেড কোড তৈরি করে ফেলবে। এখন আপনাকে এই কোডটি আপনার ওয়েবসাইটে প্লেস করতে হবে, যাতে ফেসবুক পিক্সেল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে। আপনার ওয়েবসাইটে পিক্সেল কোডটি তিন ভাবে প্লেস বা ইন্সটল করতে পারবেন:


১/ আপনি নিজেই এই কাজটি করতে পারেন।


২/ বিস্তারিত একজন ডেভলপারকে দিতে পারেন, যাতে তিনি কোডটি আপনার ওয়েবসাইটে প্লেস করে দেন।


৩/ Google tag ম্যানেজারের সাথে আপনার ফেসবুক একাউন্টটি কানেক্ট করে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার google tag ম্যানেজারকে ওয়েবসাইটের অ্যাক্সেস দিতে হবে।


আপনি নিজে যদি facebook pixel ইন্সটল করতে চান তাহলেও দুই পদ্ধতিতে আপনি কাজটি করতে পারবেন।


প্রথমত আপনি যদি wix, Squarespace, Weebly এর মত ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেখানে আপনি ফেসবুক পিক্সেল কোড প্লেস করার জন্য অপশন পাবেন। সেখানে আপনি জাস্ট ফেসবুক পিক্সেলের কোডটি প্রবেশ করে "save" বাটনে ক্লিক করে দিবেন। আর কিছু করতে হবে না।


তবে আপনি যদি আরেকটু জটিল কোন ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করেন, যেমন নিজস্ব কাস্টম ভাবে কোড করে ওয়েবসাইট তৈরি করেন অথবা ওয়ার্ডপ্রেসের মতো ওয়েবসাইট বিল্ডার নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনাকে একটু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে হবে।


ফেসবুক পিক্সেলের কোড কপি করার সেই জায়গায় একটি অপশন পাবেন সেখান থেকে স্ক্রিপ্টটি আপনাকে কপি করে নিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটের HTML এর হেডার ট্যাগ এর মধ্যে এই স্ক্রিপ্টটি কপি পেস্ট করে দিতে হবে। অতঃপর আপনার ওয়েবসাইটের এডিটর সেভ করে নিতে হবে।


ওয়েবসাইটে ফেসবুক পিক্সেল সেটাপ করে নেওয়ার পর আপনি যে নির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে চান তার উপর একটি করে ইভেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন যদি বিক্রয়ের তথ্য চান তাহলে আপনাকে বিক্রয়ের উপর ইভেন্ট তৈরি করতে হবে। এভাবে আপনি লোকেশন, যোগাযোগ, সার্চ, পেজ ভিউ ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহের জন্য আলাদা করে ইভেন্ট তৈরি করে নিবেন।


এই ধরনের ইভেন্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:


স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট

কাস্টম ইভেন্ট


স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট কিভাবে সেট-আপ করতে হয়


যদি wix, Squarespace এর মতো ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেখানে খুব সহজেই ইভেন্ট তৈরি করার এমন অপশন পেয়ে যাবেন। তবে, যদি ওয়ার্ডপ্রেস বা কাস্টম ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন তাহলে এই ইভেন্ট তৈরি করার জন্য ফেসবুক হেল্প সেন্টারের সহযোগিতা গ্রহণ করতে হবে। পিক্সেল রিলেটেড ফেসবুক হেল্প সেন্টারে বিভিন্ন ধরনের ইভেন্টের জন্য আলাদা সিঙ্গেল লাইন কোড রয়েছে। সেই কোডটি আপনি জাস্ট আগের কোডের মধ্যে কপি পেস্ট করে দিবেন।


কাস্টম ইভেন্ট কিভাবে তৈরি করতে হয়


আপনি যদি স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের বাইরেও অন্য কিছু ট্র্যাক করতে চান তাহলে কাস্টম ইভেন্ট ব্যবহার করতে হবে। আর কাস্টম ইভেন্ট আপনার ওয়েবসাইটের খুব কম তথ্যই ফেসবুকের সাথে শেয়ার করে থাকে। আপনার কাছে নিজের ওয়েবসাইটের প্রাইভেসি যদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোন ইস্যু হয়ে থাকে তাহলে কাস্টম ইভেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।


তবে স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্ট এর মত কাস্টম ইভেন্ট অতটা সহজ নয় বরং এই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজন ডেভেলপার অথবা কোডিং এক্সপার্ট এর সাহায্য নিতে হবে। একদম ইউনিক ভাবে তৈরি করা কোডের মাধ্যমে এই কাস্টম ইভেন্ট তৈরি করে নিতে হয়। যার জন্য আপনাকে ফেসবুক পিক্সেল রিলেটেড অনেক এডভান্স লেভেলের কোডিং সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।


তবে তাৎক্ষণিকভাবে যদি কোন ডেভলপার না থাকে, তাহলে আপনি গুগল ট্যাগ ম্যানেজারের মাধ্যমেও ফেসবুক পিক্সেল সেট-আপ করে নিতে পারেন। কিভাবে একটি কাস্টম ইভেন্ট তৈরি করতে পারবেন সেই প্রসেস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুগল ট্যাগ ম্যানেজার এর মধ্যে পেয়ে যাবেন।


সম্পূর্ণ সেট আপ প্রসেসটি শেষ করে ফেলার পর Facebook Pixel Helper Chrome Extension এর মাধ্যমে সেই পিক্সেলটি কাজ করছে কিনা সেটা দেখে নিতে পারেন।


এই এক্সটেনশন এর মধ্যে সিগনাল পাবেন। যদি আপনাকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয় তাহলে বুঝতে হবে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। এখন ফেসবুক বিজ্ঞাপন থেকে চমৎকার সব তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।


পরিশেষে, আপনি যদি একদম কোডিং রিলেটেড অনেক এক্সপার্ট কেউ না হয়ে থাকেন তাহলে স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের মাধ্যমেই ফেসবুক পিক্সেল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। স্ট্যান্ডার্ড ইভেন্টের মাধ্যমে কিন্তু জরুরি প্রায় সব ধরনের তথ্য এবং উপাত্তই সংগ্রহ করা যায়। নিজের ব্যবসার প্রচার এবং প্রসারের জন্য ফেসবুক পিক্সেল বর্তমানে খুব চমৎকার একটি মাধ্যম। 


আর প্রযুক্তির এই সময়ে প্রযুক্তিকে আর অবহেলা নয়। 

নিজের সমৃদ্ধির জন্যই #ডিজিটাল_মার্কেটিং শিখুন এবং ব্যবসার সুদূর প্রসারী ফলাফল উপভোগ করুন। 










Thursday, March 2, 2023

ইমেইল মার্কেটিং কি? (Email Marketing)

 ইমেইল মার্কেটিং কি? (Email Marketing)


ইমেইল মার্কেটিং জানার আগে জানতে হবে মার্কেটিং কাকে বলে। মার্কেটিং মানে হলো, বিভিন্ন রকমের মাধ্যম উপায় বা প্রক্রিয়ার দ্বারা নিজের ব্যবসা (business), পণ্য (product) বা যে কোন সার্ভিস (service) এর প্রচার করা বা বিক্রি করার চেষ্টা করা।


এখন, যেই পণ্য (product), অফার (offer), ব্যবসা (business) বা সেবার (service) প্রচার(promotion) বা মার্কেটিং ইমেইলের মাধ্যমে করা হয় সেই মার্কেটিং এর প্রক্রিয়াকেই ইমেইল মার্কেটিং (email marketing) বলা হয়। ইমেল মার্কেটিং হচ্ছে প্রথাগত ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটু পুরনো কিন্তু কার্যকরী উপায় এবং এটি ডিজিটাল মার্কেটিং বা ইন্টারনেট মার্কেটিং এর একটি অনেক বিখ্যাত মাধ্যম।


প্রমোশন বা মার্কেটিংয়ের জন্য আমরা ইমেইলের ব্যবহার সাধারণভাবেই করি। যেভাবে কাউকে একটি ইমেইল পাঠাই ঠিক সেভাবেই। কিন্তু আমরা একটি মেইল কেবল একজনকেই one-to-one পাঠায়। অথচ, ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আমরা একটি ইমেইল অনেকজনকেই একসাথে পাঠিয়ে দেয়। এতে আপনি একটি ইমেইলের দ্বারা নিজের প্রোডাক্ট, বিজনেস বা সেবার বিষয়ে হাজার হাজার লোকদের কাছে একসাথে প্রচার করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াকে email broadcasting ও বলা হয়।


ট্রানজেকশনাল ইমেইল মার্কেটিং কি?


ইমেইল মার্কেটিং এ পুরাতন কাস্টমারদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করাটা খুবই জরুরী। আর যারা আপনার পণ্য একবার হলেও কিনেছে, মনে রাখবেন, তারা আপনাকে বিশ্বাস করেছে, তাই তারা কিনেছে। 

এখন যদি তাদের কাছে নতুন করে কোন পণ্য বিক্রি করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে তাদের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে। আর পুরনো কাস্টমারদেরকে টার্গেট করে নতুন ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইমেইল পাঠানোর প্রসেসকেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভাষায় ট্রানজেকশনাল ইমেইল মার্কেটিং বলা হয়।


ডাইরেক্ট ইমেইল মার্কেটিং কি?


এটিও ইমেইল মার্কেটিং এর অন্যতম একটি মাধ্যম। এটি নতুন পণ্যের প্রমোশন কিংবা নতুন কাস্টমার খুঁজে বের করার কাজে ব্যবহার করা হয়। নতুন নতুন মানুষের ইমেইলে পণ্যের অফার কিংবা ব্যবসা সম্পর্কে জানিয়ে ইমেইল করা হয় এই পদ্ধতিতে। আর এই যে সরাসরি কোন মানুষকে ইমেইল করা হয়, তাই এটিকে ডাইরেক্ট ইমেল মার্কেটিং বলা হয়। 

তবে এই মার্কেটিং কিছুটা আলাদাভাবে করতে হয়। আপনাকে রিসার্চ করে বের করতে হবে কোন ধরনের মানুষ আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে, আর তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য থাকতে হবে আপনার কাছে। আপনার একটি বড় ইমেল লিস্ট থাকতে হবে, যে লিস্ট ধরে ধরে আপনি ইমেইল করবেন। একটি কথা জেনে রাখুন, আপনি রিসার্চ এর পেছনে যত বেশি সময় দিবেন, তত বেশি লিভ জেনারেশন হবে, তত বেশি আপনার পণ্যের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।


ইমেইল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী


আপনি চাইলেই ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই বেশ কিছু জিনিস জেনে, বুঝে, শিখে তারপর ইমেল মার্কেটিং এ নামতে হবে। এছাড়া আপনি এই ধরনের ডিজিটাল মার্কেটিং এ সফল হতে পারবেন না।

ইমেইল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী গুলো:


ইমেইলের লিস্ট তৈরি করুন-


ইমেইল মার্কেটিং করতে গেলে সবচেয়ে জরুরী যে বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে, সেটি হচ্ছে একটি ভেরিফাইড ইমেইল লিস্ট। আপনার কাছে যদি ইমেইল লিস্টই না থাকে তাহলে আপনি কোনভাবে ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন না। বিভিন্নভাবে এই ইমেইল কালেক্ট বা কেনা যায়। এই কালেক্ট করা কিংবা কিনা ইমেইলগুলো ইমেইল লিস্টে যুক্ত করতে হবে। এই যুক্ত করাটা জরুরী যে কোন ইমেল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য।


আপনার কাজের জন্য টেমপ্লেট নির্বাচন করুন-


মানুষ এখন মিনিমাম এবং আকর্ষণীয় এই দুইটা বিষয় একসাথে পছন্দ করে। আপনার ইমেইলের টেমপ্লেট যত সুন্দর হবে তত বেশি মানুষ ইমেইল পড়ে আপনার ওয়েবসাইটে কিংবা ল্যান্ডিং পেজে কিংবা প্রোডাক্ট পেজে আসতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।


আর এই কাজটি সহজে করে দিবে ইমেইল টেমপ্লেট। ইমেইল টেমপ্লেট হচ্ছে, আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা এমন কিছু ডিজাইন যা অনেক রিসার্চ করার পরে ইমেইল মার্কেটিং স্পেশালিস্টরা এবং ডিজাইনাররা বানিয়েছে।


আপনি এখান থেকে আপনার পণ্যের সাথে যায় এমন যে কোন একটি টেমপ্লেট চয়েজ করে আপনার ইমেইলটি ডিজাইন করে ফেলতে পারবেন। জেনে রাখা ভালো যে, একটি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় কাস্টম ইমেইল ডিজাইন আপনার পণ্যের বিক্রি অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। 


আর টেমপ্লেট ইউজ করলে আপনার নিজের ডিজাইন করার কষ্ট কমে যাবে, তাছাড়া সময় বেঁচে যাবে। যা আপনি আপনার ব্যবসার অন্যান্য জরুরী কাজে ব্যয় করতে পারবেন।


আকর্ষণীয় মেসেজ লেখার চেষ্টা করুন-


একটি ইমেইলের মূল বিষয় হচ্ছে এর ভেতরে থাকা কনটেন্ট। ভালো ডিজাইন আপনার কাস্টমারকে ইমেইল পড়তে সুবিধা দিবে, কিন্তু ইমেইলের মধ্যে থাকা কনটেন্ট যদি আকর্ষণীয় না হয় তাহলে কিন্তু মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ইমেইল না পড়ে বের হয়ে যাবে।


ইমেইলের কনটেন্ট এর প্রতি খুবই গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রফেশনাল রাইটার দিয়ে ইমেইল লিখিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে হবে। তবে যদি নিজে লিখতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেই ইমেইল লিখে ফেলতে পারেন।


ইমেইল লেখার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কাস্টমার যেন আপনার ইমেইল পড়ে আপনার পণ্যের ব্যাপারে আকৃষ্ট হয়ে সেখান থেকে ক্লিক করে আপনার প্রোডাক্ট পেজে চলে আসে। কোন কাস্টমার যদি আপনার ইমেইল পড়ে আপনার প্রোডাক্ট পেজে না আসে আর না কিনে, তাহলে কিন্তু এই ইমেইল মার্কেটিং আপনার জন্য ভালো না হতেও পারে।


তাই ইমেইলের মধ্যে সঠিকভাবে কল টু একশন বাটন দেয়া, কাস্টমার আকৃষ্ট হবে এমন ইন্টারেক্টিভ টেক্সট অ্যাড করতে হবে। আর প্রফেশনালি ইমেইলকে অপটিমাইজ করতে হবে।


সঠিক সময়ে ইমেইল পাঠান-


আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, ইমেইল তো যে কোন সময়েই পাঠানো যায়। তাহলে আবার সময় মেনে কেন ইমেইল পাঠাতে হবে? আসলে মানুষ যখন অ্যাক্টিভ থাকে, কিংবা একটু ফ্রি থাকে সেসব টাইমে কিন্তু তারা মোবাইল হাতে নিয়ে বিভিন্ন এপ্লিকেশন দেখে থাকে।


তাই যদি সেই সময়গুলোতে কাস্টমারদের কি ইমেইল করতে পারেন, তাহলে আপনার ইমেইল ওপেন হবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। যেমন মাঝ রাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে এই সময় যদি আপনি ইমেইল করেন তো আপনার ইমেইল কে দেখবে? আসলে কেউই না। আপনার ইমেল আরো অনেকের ইমেইলের ভিড়ে হারিয়ে যাবে।


তবে স্বাভাবিকভাবে ধরা হয় যে, অফিস টাইম কিংবা সন্ধ্যার সময় মানুষ অনলাইনে বেশি থাকে। তাই যদি সফলভাবে ইমেইল মার্কেটিং করতে চান তাহলে আপনাকে সময়ের বিষয়টা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। ভালোভাবে রিসার্চ করে তারপরে ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালু করতে হবে।


ইমেইল মার্কেটিং করে কি কি লাভ পাবেন?


আসলে যদি ইমেইল মার্কেটিং শিখতে পারেন, তাহলে এই ইমেইল মার্কেটিং করেই অনেক কিছু করতে পারবেন। আপনি নিজে নিজে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের মার্কেটিং করে এফিলিয়েট কমিশন আয় করতে পারেন। কিংবা নিজের ব্যবসা থাকলে, আপনার পণ্যের জন্যও ইমেইল মার্কেটিং করে পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে নিতে পারেন। ইমেইল মার্কেটিং করে কি কি লাভ হতে পারে: 


১. ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নতুন নতুন কাস্টমার পেতে পারেন।


২. ইমেইল মার্কেটিং করে আপনার ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ভিজিটর নিয়ে আসতে পারেন।


৩. ইমেইল মার্কেটিং করে আপনি আপনার নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে মানুষকে জানাতে পারবেন। আর তারপর তারা আকৃষ্ট হয়ে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করবে।


৪. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের ইমেল মার্কেটিং করে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।


ইমেইল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবেন?


ইমেইল মার্কেটিং এ সফল হতে হলে আপনাকে বিভিন্নভাবে কাস্টমারের সাথে কানেক্টেড থাকতে হবে। নির্দিষ্ট একটি সময় পর পর তাদের ইমেইলে আপনার নতুন নতুন অফার কিংবা বিজনেসের নতুন আপডেট সম্পর্কে জানাতে হবে। এইভাবে আপনি ডিজিটালি তাদের সাথে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন। ইমেইল মার্কেটিং করতে গেলে কিভাবে শুরু করতে হবে:


টেকনিক্যাল স্কিল


যদি একজন ভালো ইমেইল মার্কেটার হতে চান তাহলে আপনাকে টেকনোলজিক্যালি স্কিলড হতে হবে। এছাড়া ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিতে কোনোভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তার মানে এই না যে, প্রোগ্রামিং কিংবা কোডিং জানতে হবে‌। আসলে ইমেল মার্কেটিং এর অনেক কিছুই অটোমোশন মাধ্যমে করা সম্ভব। তাই যদি সেগুলো সম্পর্কে জেনে রাখেন বা কিভাবে শিখতে হয় বা করতে হয় সেটা যদি রপ্ত করতে পারেন, তাহলে আপনার অনেক বড় বড় কাজই সহজ হয়ে যাবে।


ধরুন আপনার কাছে ১০০০০ মানুষের ইমেইল আছে, এখন যদি একটি একটি করে ইমেইল পাঠাতে চান তাহলে ভেবে দেখুন তো ইমেইল গুলো পাঠাতে কতদিন লাগবে। এই জায়গাতেই অটোমোশন জানতে হবে। বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং টুল বা সফটওয়্যার আছে যেগুলো ব্যবহার করে নিমিষেই হাজার হাজার মানুষের কাছে একসাথে ইমেইল পাঠানো যায়।


এরপর ধরুন আপনি চাচ্ছেন, প্রথমবার ইমেইল পাঠানোর পরে যারা আপনার ইমেইল ওপেন করবে তাদেরকে অটোমেটিক্যালি আরেকটি ইমেইল পাঠানো হবে। এই কাজটিও অটোমোশনের মাধ্যমে করতে হবে। এরকম অনেক ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন তবে আপনাকে শিখে নিতে হবে।


কমিউনিকেশন স্কিল


মনে রাখবেন আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যতো ভাল, আপনি তত ভাল মার্কেটার হতে পারবেন। নিজের বিজনেস কিংবা পণ্যটিকে সঠিক কাস্টমারের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরাটা অনেক বড় একটি বিষয়। আর যোগাযোগ করার স্কিন যদি ভালো না হয় তাহলে এই কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন না।


আপনি যে ইমেইলটি লিখবেন, সেটি কাস্টোমাররা পড়ে যদি পণ্যটি কিনতে আগ্রহী না হয় তাহলে কিন্তু সব কষ্ট বৃথা হয়ে যাবে। তাই কমিউনিকেশনের ব্যাপারে স্কিল্ড হতে হবে। 


সঠিক কনটেন্ট নির্বাচন


ডিজিটাল কনটেন্ট অনেক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, টেক্সট কনটেন্ট, গ্রাফিক কন্টেন্ট, ভিডিও কনটেন্ট, ওডিও কন্টেন্ট ইত্যাদি। আপনাকে রিসার্চ করে বের করতে হবে, আপনার কাস্টমাররা কোন ধরনের কনটেন্ট বেশি পছন্দ করে‌। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট ব্যবহার করে ক্যাম্পেইন চালিয়ে বের করতে পারেন যে কোন ধরনের কনটেন্ট থেকে বেশি প্রফিট আসছে। তারপর সেই ধরনের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে পারেন।


তবে আপনার পণ্যের উপর নির্ভর করবে কোন ধরনের কনটেন্ট দিলে বিক্রয় (sale) বেশি হবে। তাই আপনাকে খুব ভালো করে জানতে হবে এবং বুঝতে হবে এছাড়া আপনার ক্যাম্পেন বিফল হবার একটি সম্ভাবনা থেকে যায়।


ইমেইল মার্কেটিং করার নিয়ম


ইমেল মার্কেটিং মানে অন্য ইমেইল আইডিতে নিজের বানানো ইমেইল পাঠানো। কিন্তু এই ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য gmail, yahoo বা outlook এর মতো সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে না।


কারণ, জিমেইল বা অন্য ফ্রি ইমেইল একাউন্ট থেকে কেবল কিছু নির্ধারিত সংখ্যায় ইমেইল পাঠাতে পারবেন। এবং এটাও হতে পারে যে একসাথে হাজার হাজার লোকদের ইমেইল পাঠানোর জন্য email spamming এর সন্দেহে আপনার ইমেইল একাউন্ট gmail, yahoo বা outlook দ্বারা ব্লক করিয়ে দেয়া যেতে পারে।


এর জন্য আপনাকে email marketing tools বা website ব্যবহার করতে হবে। অনলাইন ইন্টারনেটে অনেক email marketing tools রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে একসাথে হাজার হাজার লোকদের ইমেইল পাঠিয়ে নিজের বিজনেসের মার্কেটিং করতে পারবেন।


বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং টুলস


ইমেল মার্কেটিং এর অনেক টুলস এবং সফটওয়্যার আছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সফলভাবে আপনার ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেন। তবে সেইসব tools সম্পর্কে না জেনে ব্যবহার না করাই ভালো। বাজারে দুই ধরনের টুলস আছে, ফ্রি এবং পেইড। আবার পেইড টুলগুলো অনেক সময় এক মাস বা এক সপ্তাহের জন্য ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেয়া হয়। এতে আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে তাদের সাবস্ক্রিপশন কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকটি পপুলার ইমেইল মার্কেটিং টুলস এর নাম:


FeedBurner

MailChimp

Constant Contact

SendPress

SendinBlue

Drip

ConvertKit

AWeber

MilerLite

GetResponse 


ইমেইল মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম। আপনি যদি সঠিকভাবে ইমেইল মার্কেটিং শিখতে পারেন তাহলে আপনি এখানে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারবেন। এমন অনেক কোম্পানি আছে যারা ইমেইল মার্কেটারদের কাছ থেকে কাস্টমারের ইনফরমেশন কিনে থাকেন। এছাড়া অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ ইমেইল মার্কেটিং এর জুড়ি অনেক।


বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম যেমন, Fiverr, Upwork, PeoplePerHour, Freelancer.com ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে কাজের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। Fiverr এ ইমেল মার্কেটিং এ ৩৪৯৬ সার্ভিস রয়েছে। যেখানে ২০ ডলার থেকে শুরু করে প্রিমিয়ামে ২৫০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।




Sunday, January 29, 2023

ওয়েব ব্রাউজার (Browser) কি, এর কাজ কি এবং জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার গুলো কি?

 🌐 ওয়েব ব্রাউজার (Browser) কি, এর কাজ কি এবং জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার গুলো কি?


আজকে ইন্টারনেটের যুগে ওয়েব ব্রাউজার সবাই ব্যবহার করে। কারণ ওয়েব ব্রাউজার ছাড়া ইন্টারনেট চালানো সম্ভব নয়। ওয়েব ব্রাউজার আমরা মোবাইল, ল্যাপটপ এবং অ্যাপেল ডিভাইসে ব্যবহার করে ইন্টারনেট এক্সেস করে থাকি।


উইকিপিডিয়া ডেফিনেশন হিসেবে ওয়েব ব্রাউজার এমন একটি software যার সাহায্যে কোন user কোন একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য ওয়েব সার্ভার থেকে তার ডিভাইসে দেখতে পারে।


Browser মানে হলো খোঁজা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন জিনিস খোঁজা হলে তাকে ব্রাউজিং বলা হয়। আজকের যুগে প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ internet ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্রাউজিং করে থাকে।


Web Browser কি?


ওয়েব ব্রাউজার (Web Browser) এ দুটি আলাদা শব্দ। ওয়েব মানে হলো 'internet' এবং 'browser' মানে হলো খোঁজা। সুতরাং ওয়েব ব্রাউজার এর পুরো কথা হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন কিছু খোঁজা বা খুঁজে বের করা।


Web Browser হলো একধরনের এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। যেটি ডিভাইসের মধ্যে ইনস্টল করে ইন্টারনেট থেকে কোন জিনিস খোঁজার জন্য ব্যবহার করা হয়। ওয়েব ব্রাউজার এর মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন ধরনের টেক্সট, ভিডিও, ওয়েব পেজ এবং কনটেন্ট দেখা ও পড়া যায়।


ইন্টারনেটে সবকিছু HTML ভার্সনে আপলোড করা থাকে। কিন্তু মানুষের পক্ষে HTML ভার্সনের সাহায্যে ইনফরমেশন নেওয়া সম্ভব নয়। তাই ওয়েব ব্রাউজার সেটি কি আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজে ট্রান্সলেট করে আমাদের সামনে পরিবেশন করে।


আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্রাউজারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্পর্কে:


প্রথম ওয়েব ব্রাউজার কোনটি?


World wide web বা www এটি হলো প্রথম ওয়েব ব্রাউজার এবং এই ওয়েব ব্রাউজারের সাহায্যে প্রথম internet access করা হয়। ১৯৯০ সালে স্যার Tim Berners Lee তৈরি করেছিলেন। এরপর ১৯৯১ সালে লাইন মোড ব্রাউজার তৈরি করা হয়। এর পরের অংশ শুধু এগিয়ে চলার গল্প। ইন্টারনেট জগতের উন্নতির সাথে সাথে ব্রাউজারের অভুত পূর্ব পরিবর্তন এসেছে।


১৯৯৩ সালে তৈরি হওয়া মোজাইক ব্রাউজার পৃথিবীর প্রথম সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। এই মোজাইক ব্রাউজারটির মধ্যে ছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI)। এরপর এলো মাইক্রোসফট এর যুগ। মাইক্রোসফট এর বাজারে আনা প্রথম ইন্টারনেট ব্রাউজারটির নাম হলো ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার যেটি microsoft ১৯৯৫ সালে বাজারে এনেছিল।


মূলত মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের pre installed অবস্থায় আসতো। ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্রাউজারের জগতে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সবচেয়ে উপরের দিকে ছিল। ২০০২ এর হিসেব অনুযায়ী ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৯৫% দখল করেছিল। এরপর ধীরে ধীরে ওয়েব দুনিয়া আরেক ইতিহাসের মুখে এসে দাঁড়ালো যখন ২০০৮ সালে Google Chrome Browser প্রথম বাজারে আনলো।


২০০৮ সালে গুগল ক্রোম ব্রাউজার আসার পর ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং বর্তমানে গুগল ক্রোম ব্রাউজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় ইন্টারনেট ব্রাউজার।


২০১৯ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন মানুষ ব্রাউজার ব্যবহার করেন। সমস্ত ব্রাউজার এর মধ্যে google chrome সবচেয়ে জনপ্রিয় যার বর্তমান মার্কেট শেয়ার ৬৪%।


দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে Apple এর সাফারি যার মার্কেট শেয়ার ১৮%। এছাড়া অন্যান্য ব্রাউজার গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফায়ারফক্স এবং মাইক্রোসফটের এজ। মাইক্রোসফট ও প্রতিযোগিতা ছাড়লো না।


২০১৫ সালে Windows 10 রিলিজ করার সাথে সাথে ক্রোমিয়াম নির্ভর এজ ব্রাউজারটি বাজারে আনে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর মত অতটা না হলেও এজ ব্রাউজার ও বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার হিসেবে ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে।


Google Chrome ওয়েব ব্রাউজার ডেভেলপ করেছে যা পরবর্তীকালে ওয়েব ব্রাউজারের দুনিয়াতে বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করেন। গুগল ক্রোম এর global market শেয়ার প্রায় ৬৫%।


জনপ্রিয় কয়েকটি ওয়েব ব্রাউজার:


১. গুগল ক্রোম (Google Chrome):

গুগল ক্রোম বর্তমান সময়ে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সেরা ব্রাউজার। গুগল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজারে জগতে সবচেয়ে পরিচিত নাম। ২০০৮ সালে বাজারে আসার পর windows এর সাথে সাথে এটি ম্যাক এবং লিনাক্স কম্পিউটারের জন্য available হয়। এছাড়াও মোবাইলের জন্য অ্যান্ড্রয়েড এবং আই ও এস অপারেটিং সিস্টেম সবার জন্যই পাওয়া যায় google chrome। এর কারণ যেহেতু গুগল ক্রোম গুগল এর একটি প্রোডাক্ট তাই গুগলের যে কোন সার্ভিস গুগল ক্রোমে খুব ভালো লোড হয়। গুগল ক্রোমের অসাধারণ ব্রাউজার এক্সটেনশন লাইব্রেরী এবং প্রতিনিয়ত সিকিউরিটি আপডেট গুগল ক্রোম কে অন্যান্য ব্রাউজার থেকে এগিয়ে রেখেছে। অনেকেই বলেন গুগল ক্রোমের incognito মোড প্রাইভেসিকে সম্পূর্ণরূপে প্রোটেক্ট করতে পারেনা। তবে কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও google chrome অনেক এগিয়ে।


২. মাইক্রোসফট এজ (Microsoft Edge):

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর পর এটি মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। Microsoft Edge এর উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলির মধ্যে হল built-in কর্টানা সাপোর্ট, বুক মার্ক এবং browsing history synced, টাইমলাইন সাপোর্ট।

এছাড়াও ভয়েসে dictate ও মাইক্রোসফট এজ এর নতুন একটি প্রযুক্তি। তবে অনেকের মতে মাইক্রোসফট এজ একটু বেশি resource hungry software যার ফলে আপনার মেশিনের কনফিগারেশন কম থাকলে আপনি মাইক্রোসফট এজ এর থেকে ১০০% পারফরম্যান্স পাবেন না। 


৩. আলোহা (Aloha) ব্রাউজার:

আলোহা ব্রাউজারটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্রাউজার। ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক করতে ভালোবাসেন তাদের জন্য আলোহা ব্রাউজার উপযোগী কারণ এই ব্রাউজার ব্যবহার করলে আপনারা আলাদা করে কোন VPN Software ব্যবহার করার দরকার হয় না। এটির built-in ভার্চুয়ালিটি ভিডিওস সাপোর্ট ব্রাউজারটিকে বেশ আকর্ষণীয় করেছে।

ব্রাউজারটির কিছু দুর্বল দিক রয়েছে যেমন ব্রাউজারটিতে প্রচুর সংখ্যক অবাঞ্চিত এড দেখা যায়, এটি আই এস এর ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট করে না।


৪. ব্রেভ (Brave) ব্রাউজার:

Brave ব্রাউজার মূলত প্রাইভেসি কেন্দ্রিক ব্রাউজার। আপনারা যারা নিজেদের প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে চান তাদের জন্য Brave ব্রাউজারটি দারুন। এটি অ্যাডভারটাইসিং, কুকিজ, ফিসলিং থেকে অটোমেটিক্যালি আপনার ডিভাইসটি রক্ষা করে।

এটির মধ্যে থাকা https everywhere প্রযুক্তির সাহায্যে এটি ব্রাউজার ফিঙ্গারপ্রিন্টিং কে প্রতিহত করতে পারে। এছাড়াও ব্রাউজারটির মধ্যে অটোমেটিক্যালি cryptocurrency ওয়ালেট সাপোর্ট আছে। আপনি যদি ক্রিপ্টো কারেন্সিতে আগ্রহী হন তবে এই ক্রিপ্টো কারেন্সিও আপনি আপনার ব্রাউজার এর মাধ্যমে জমাতে পারেন basic attention token হিসাবে। 

উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স কম্পিউটারের সাথে ব্রাউজারটি আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য available।


৫. ভিভালদি (Vivaldi) ব্রাউজার:

Vivaldi browser মূলত একটি প্রাইভেসি কেন্দ্রিক ব্রাউজার। এটি ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম তৈরি হয়েছিল। এই ব্রাউজারের প্রধান উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আপনি এই ব্রাউজারটিকে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারেন। এটি উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স কম্পিউটারের জন্য available।


৬. ডাকডাকগো (Duck Duck Go):

ডাকডাকগো মূলত একটি সার্চ ইঞ্জিন। তবে এটি একটি প্রাইভেট ইন্টারনেট ব্রাউজার হিসেবেও পরিচিত। এটি আপনা থেকেই সমস্ত অনলাইন ট্রাকিং প্রতিহত করে। আপনারা যারা প্রাইভেসি ফোকাস তারা এই ডাকডাকগো অনায়েসে ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্রাউজারটির আরেকটি বিষয় হলো এটি একটি সিকিউরিটি ফিচার। আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হিস্ট্রি কোন কিছুই ডাকডাকগো নিজের কাছে জমা করে রাখেনা। বর্তমানে ডাকডাকগো Android iOS এর জন্য available।


৭. সাফারি (Safari):

Apple ব্যবহারকারীদের জন্য সাফারি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রাউজার। অ্যাপেলের তরফ থেকে সাফারি হল সর্বপ্রথম ওয়েব ব্রাউজার যেটি iphone ipad apple watch এ সমস্ত ডিভাইসে সাপোর্ট করে। ব্রাউজারটির বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটির built-in applied সাপোর্ট এবং ব্রাউজিং হিস্টরি সিন্স ইত্যাদি। ব্রাউজারটির কিছু কিছু দুর্বল দিক হলো সীমিত কাস্টমাইজেশনের অপশন।


৮. ফায়ারফক্স (Firefox):

ফায়ারফক্স অনেকেই মজিলা ফায়ারফক্স বলে থাকেন। এটি অনেক পুরাতন ওয়েব ব্রাউজার এবং ২০০২ সাল থেকে মার্কেটে রয়েছে। এই ব্রাউজারটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো অসংখ্য লাইব্রেরী এবং উইন্ডোজের হ্যালো অথেন্টিকেশন।

বর্তমানে ফায়ারফক্স উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্স, আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড সমস্ত প্রকার ডিভাইসের জন্য available।


৯. Opera ব্রাউজার:

Opera browser ১৯৯৬ সালে প্রথম এসেছিল এরপর এটি বেশ জনপ্রিয় হয়। এই ব্রাউজার ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাপোর্ট করে এই সমস্ত মিডিয়াগুলো আপনার ব্রাউজার থেকেই ব্যবহার করার সুযোগ দেয় addon হিসাবে।

এছাড়া কাস্টম ওয়ালপেপার, অপেরা ইউএসবি টিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অপেরা ইউএসবি কোন অপেরার একটি ক্ষুদ্র ভার্সন যেটিকে যে কোন ইউএসবি ড্রাইভ থেকে আপনি আপনার কম্পিউটারে চালাতে পারেন।

তাই আপনি যদি light version ভালো মানের ওয়েব ব্রাউজার এর খোঁজ করে থাকেন তবে অপেরা ইউএসবি আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে।








Tuesday, December 27, 2022

Hal Elrod (হ্যাল এলরড) এর জীবনী "The Miracle Morning"

 হ্যাল এলরড। তিনি ক্যামেরিনো, ক্যালিফর্নিয়ায় ১৯৭৯ সালে ৩০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন আমেরিকান লেখক, স্পিকার এবং সফল প্রশিক্ষক। তিনি 'The Miracle Morning' সিরিজের লেখক। হ্যাল এলরডের বয়স যখন ২০ বছর তখন তিনি একটি ভয়ংকর অটোমোবাইল দূর্ঘটনায় আহত হন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখ একটি গাড়ি হ্যাল এলরডের গাড়ি কে সজরে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনাটিতে তার শরীরের এগারো টি হাড় ভেঙে যায় এবং তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ছয় মিনিট পর পুনরায় তার হার্টবিট শুরু হয়। তিনি ছয় দিন পর্যন্ত কোমায় ছিলেন। সপ্তম দিন তার জ্ঞান ফিরে এবং ডাক্তার তাকে জানাই তিনি কখনো চলাফেরা করতে পারবেনা। কিন্তু হ্যাল এলরড জীবনের কাছে হার মানেনি। এই ঘটনার কয়েক বছর পর হ্যাল এলরড একজন পেশাদার বক্তা, জনপ্রিয় লেখক এবং আলট্রা ম্যারাথন দৌড়বিধ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অনেকটা মৃত্যুর পর তিনি আবার বেঁচে উঠেন এবং ডাক্তারের সকল অনুমানকে মিথ্যে প্রমাণিত করে আজ তিনি এ অবস্থানে পৌঁছান। 


হ্যাল এলরড বলেন এর জন্য সবচাইতে প্রথমে আপনাকে ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে।


কোমা থেকে ওঠার পর তিনি ছয়টি প্রাত্যহিক অভ্যাস করেছিলেন যা তার জীবনকে বদলে দিয়েছিল। যেগুলো তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। এইসব তিনি শিখেছিলেন বিভিন্ন বই পড়ে এবং অন্য সব সফল মানুষদের জীবনী থেকে। হ্যাল এলরড তার সর্বাধিক বিক্রিত বই 'The Miracle Morning' এ তার এই সব অভ্যাসের কথা বর্ণনা করেন যা তিনি প্রতিদিন অনুশীলন করতেন।


এই অভ্যাসগুলো অনুসরণ করে আপনিও একজন সফল মানুষে পরিণত হতে পারেন।


এই ছয়টি অভ্যাস খুবই কার্যকরী ছিল তাই হ্যাল এই অভ্যাসগুলো প্রতিদিন অনুশীলন করতেন। যখন তিনি এগুলো শুরু করেছিলেন তখন তার ১৫ হাজার ডলার ধার ছিল, নিজের বাড়িটিও বিক্রি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি একদম স্বাস্থ্যহীন এবং বিষন্ন ছিলেন। এই ছয়টি সকালের অভ্যাস নিয়মিত শুরু করার পর দুই মাসের মধ্যে তার উপার্জন দ্বিগুণ হয়ে যায়। নিজের বাড়িটি বিক্রির হাত থেকে বাঁচান। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে আলট্রা মেরাথন দৌড়বিদ হন এবং একজন সুখী মানুষও হন। সেই ব্যক্তিটি যাকে ডাক্তার বলেছিল কখনো চলতে পারবে না। এসব এত তাড়াতাড়ি হয়েছিল যে হ্যাল এলরড নিজেই অবাক হয়ে যান। তাই তিনি বইটির নাম রাখলেন 'The Miracle Morning' যার অর্থ দাঁড়ায় 'অলৌকিক সকাল'। কারণ তার কাছে এগুলো অলৌকিকই মনে হচ্ছিল।


হ্যাল এলরড পাঠকদের প্রতিদিনের স্বাভাবিকের চেয়ে এক ঘণ্টা আগে উঠতে উৎসাহিত করেন।


হ্যাল এলরড তার 'The Miracle Morning' বই এ বলেছেন, তিনি গবেষণা করে দেখেছেন সফল লোকেরা দৈনিক ছয়টি কাজের একটি কাজ অন্তত করেন। এগুলোকে তিনি নাম দিয়েছেন:

S.A.V.E.R.S

অর্থাৎ -


এস (S)- Silence বা মেডিটেশন

মানে প্রার্থনা, ধ্যান যা মস্তিষ্ককে শিথিল করে দিনের ভালো একটা শুরু দেয় এবং মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ কর্মক্ষম করে দেয়। প্রথমে লেখকের মনে হতো মেডিটেশন বা প্রার্থনা একটি ধর্মীয় ব্যাপার মাত্র যার সাথে সফলতার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি গবেষণা করে এবং সফল মানুষদের জীবনী পড়ে জানতে পারেন এটি এমন একটি হাতিয়ার যা সফল মানুষদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে।


এ (A)- Affirmation বা নিশ্চিতকরণ

এই কাজটি আপনি আপনার জীবনের লক্ষ্য লিখেও করতে পারেন। তিনটি কথা আপনি লিখতে পারেন:

১. আপনি আপনাকে কেমন দেখতে চান?

২. আপনি এই পরিবর্তনগুলো কেন চান?

৩. এই কাজগুলো করার জন্য আপনি কি কি অঙ্গীকার করেছেন?

এই কথাগুলো একটি ডাইরিতে লিখুন এবং প্রতিদিন সকালে পড়ুন।


ভি (V)- Visualisation বা নিজের স্বপ্নগুলো ভাবা

তৃতীয়টি হচ্ছে নিজের কল্পনা শক্তির ব্যবহার। নিজের সাথে কথোপকথন এবং কল্পনা শক্তির ব্যবহার এই দুইটি যেন জমজ ভাই বোনের মত। আপনার মনে হতে পারে এই দুটি একই বিষয়। কিন্তু আসলে দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কথোপকথন সাহায্য করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গুলোকে মনে রাখতে এবং শেষ ইচ্ছা গুলো কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দেয়। ধরুন কল্পনা হচ্ছে একটি দৃশ্য এবং কথোপকথন হচ্ছে তার ধ্বনি বা আওয়াজ।


ই (E)- Exercise বা ব্যায়াম করা

চতুর্থ অভ্যাস হচ্ছে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা। আমরা সবাই জানি শরীরচর্চা আমাদের শরীরের জন্য খুবই জরুরী। কিন্তু আমরা প্রায় সব মানুষই এটিকে এড়িয়ে চলি। যে কোন সাধারণ ব্যায়ামও হতে পারে। ২০ থেকে ২১ দিন একটু কষ্ট করে সকাল সকাল উঠলে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। সকালে ব্যায়াম করার অনেক বৈজ্ঞানিক উপকারিতা রয়েছে। ব্যায়াম করার ফলে মস্তিষ্কে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন যায় এবং এটি মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন রস নিঃসরণ করে।


আর ( R )- Reading বা পড়া

পঞ্চম অভ্যাস কি হচ্ছে পড়াশুনা করা। যেকোনো ভালো বইয়ের একটা চ্যাপ্টার পড়া। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য পড়াশুনা সবচেয়ে ভালো একটি উপায়। প্রতিদিন সকালে অন্তত দশ পৃষ্ঠা বই পড়ার চেষ্টা করা। এই হিসাবে বছর শেষে ৩৬৫০ পৃষ্ঠা পড়া হবে যেটি প্রায় ১৭-১৮ টি বইয়ের সমান। সত্যিই দেখুন একটি ছোট প্রতিজ্ঞা আপনার জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন আনতে পারে।


এস (S)- Scribing বা লিখা

ষষ্ঠ এবং শেষ অভ্যাসটি হলো লেখা। নিজের স্বপ্নগুলো বা দৈনিক কি কাজ করতে হবে তা লিখে রাখা। প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিট ব্যয় করতে হবে চিন্তা এবং আবেগগুলো লিখতে। এটি থেকে প্রতিদিনই নতুন কিছু শিখবেন। ইংরেজিতে এটি কে বলে 'morning page' বাংলায় বলা যায় 'ভোরের পত্র'। হ্যাল এলরড এই পত্রটিকে দুই ভাগে লিখতেন। প্রথম ভাগে 'আজকের শিক্ষা' অর্থাৎ এখন পর্যন্ত কি কি শিখেছি আর কি কি পেয়েছি এবং দ্বিতীয় ভাগে লিখতেন 'নতুন পরিকল্পনা' অর্থাৎ আরো নতুন কি শিখতে হবে বা আরো কি করতে হবে এই প্রক্রিয়াটি হ্যাল কে লক্ষ্যে অটুট থাকতে সাহায্য করেছিল।


এই প্রাত্যহিক কার্যকলাপ অনুসরণ করার জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে ভরে ঘুম থেকে উঠা। আর এইসব নিত্যকর্ম সকাল আটটার মধ্যে শেষ করতে হবে। যেমন "The Miracle Morning" এই বইটির বিকল্প শিরোনাম হলো, সকাল ৮:০০ টার আগে ৬ টি অভ্যাস যা আপনার জীবনকে পরিবর্তন করবে।


Summary (সারসংক্ষেপ)

আপনি কি প্রস্তুত জীবনকে পরের ধাপে উন্নীত করার জন্য? আপনার ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনের পরবর্তী ধাপ কোনটা? জীবনের ঠিক কোন পরিবর্তন আপনি সেই ধাপে উন্নীত হবেন? একদিন একদিন করে শুরু করুন আপনার অতীত যাই হোক না কেন আপনি আপনার ভবিষ্যত পরিবর্তন আনতে পারবেন বর্তমানকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে। বর্তমান আপনার অতীতের কর্মফলের প্রতিচ্ছবি। ঠিক তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে আপনি কি হতে চান সে ব্যাপারে এই মুহূর্তের সিদ্ধান্তের ওপর। এই মুহূর্তটা আপনার পরবর্তী দিনের সুখ, স্বাস্থ্য, সম্পদ, সাফল্য যা আপনার প্রাপ্য তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে অপেক্ষা না করে শুরু করুন। আগামীকালই হোক সেই স্মরণীয় দিন যেদিন আপনি এত দিনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের যাত্রা শুরু করবেন।





Thursday, November 24, 2022

বেকারত্ব নিরশনে ফ্রিল্যান্সিং

 ♻️ বেকারত্ব নিরশনে ফ্রিল্যান্সিং:


বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশ শিক্ষিত বেকার। শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করলে দেখা যায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ থেকে ৬ লাখ আছেন। তারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েও পছন্দ মত কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। বিপুলসংখ্যক এই কর্মক্ষম জনশক্তিকে সম্ভাবনাময় শ্রমশক্তি বলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে উপযুক্ত কাজের অভাবে অপচয় হচ্ছে সম্ভাবনাময় জনশক্তি। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এই সময় একজন শিক্ষিত বেকার সহজে স্বাবলম্বী হতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।


ফ্রিল্যান্সিং হলো মুক্ত পেশা। ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়। কাজ করার জন্য কোন অফিসের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ। কাজের কোন নির্ধারিত সময় নেই। নিজের সময় ও সুযোগ মতো কাজ করা যায়। তাই বর্তমানে সারা বিশ্বের তরুণ-তরুণীদের কাছে ফ্রিল্যান্সিং বহুলভাবে জনপ্রিয়। তাই প্রতিনিয়ত এর ক্ষেত্রও প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি এখন তাদের কাজগুলো অফিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে। এতে কোম্পানিগুলো কাজের জন্য দক্ষ কর্মী পাচ্ছে এবং কর্মীরা অন্য দেশ থেকে রেমিটেন্স আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারছে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হচ্ছে Upwork, Fiverr, Freelancer.com, peopleperhour, 99designs, guru.com, ইত্যাদি। এসব ওয়েবসাইটে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, কন্টেন্ট রাইটিং, ডাটা এন্ট্রি, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি কাজ করে যে কোন চাকরির থেকে বেশি অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।


'টাইম ইজ মানি' ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যারা পেশাদার ফ্রিল্যান্সার, তাদের সময়ের প্রতি গুরুত্ব বেশি। ফ্রিল্যান্সিং কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ কাজই করা হয় বহির্বিশ্বের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে, যার কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ভালো ভালো কাজের মাধ্যমে অনলাইন জগতে সুনাম অর্জন করা যায়। সর্বোপরি ফ্রিল্যান্সিং টাকা আয় করার জন্য একটি উৎকৃষ্ট পন্থা।




মোটিভেশনাল গল্প

একটি শহরে এক ধনী ব্যক্তি ছিল, ব্যবসা বাণিজ্যে অর্থ সম্মান কোনো দিক থেকেই তার কোনো কমতি ছিলো না, সকল প্রকার সুখ সম্পত্তি ছিল তার নিত্য নৈমিত্...